হিন্দু বাঙালির বাড়িতে প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়ম মেনে লক্ষ্মীপুজো করা হয়। এছাড়াও পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি, দীপাবলিতেও দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয় বিভিন্ন বাড়িতে। তার মধ্যেই শনিবার ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ বিশেষ লক্ষ্মীপুজো। এই পুজো পূর্ণিমায় করা হয়। এই পুজোর নাম কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। কোজাগরী শব্দটি এসেছে 'কো জাগতী' থেকে। যার অর্থ, 'কে জেগে আছ?'
এবছর কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সময়কাল
এই দিন চন্দ্রোদয় ঘটবে বিকেল ৫টা ২০ নাগাদ। পূর্ণিমা শুরু- ২৮ অক্টোবর ভোর ৪টে ১৭-য়। পূর্ণিমা তিথি শেষ- ২৯ অক্টোবর, রবিবার মধ্যরাত ১টা ৫৩ মিনিটে।
পূর্ণিমা শেষেই চন্দ্রগ্রহণ
এবছর পূর্ণিমার শেষলগ্নে শুরু হচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ। যা শুরু হচ্ছে রবিবার, ২৯ অক্টোবর মধ্যরাত ০১টা ০৫ মিনিটে। শেষ হবে রাত ০২টো ২৪ মিনিটে। শাস্ত্রমতে, গ্রহণের আগে সূতক কাল শুরু হয়। এই সময় কোনও পূজাপাঠ করা উচিত নয়। মন্দির এবং ঠাকুরঘরের দরজাও বন্ধ রাখা উচিত। দেবী-দেবতার মূর্তি বা ছবি স্পর্শ করতে নেই। সূতক কাল শুরু হবে চন্দ্রগ্রহণের ৯ ঘণ্টা আগে। তাই ওই সময়ের আগে পূজার্চনা করে নেওয়াই শুভ।
শুভ যোগ
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় এবছর থাকছে একাধিক শুভযোগ। যা সংগঠিত হবে ২৮ অক্টোবর, শনিবার। সেগুলো হল- গজকেশরী যোগ, বুধাদিত্য যোগ, শশ যোগ এবং সিদ্ধি যোগ।
যাতে খুশি হন দেবী
এক) কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় শারদ পূর্ণিমার রাতে চাঁদের আলোয় যদি পায়েস রাখা যায়, তাহলে সংসারের অর্থকষ্ট নিমেষে দূর হয়। এই পায়েস খেলে মনের ইচ্ছাপূরণ হয় ধারণা।
দুই) কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় দেবী লক্ষ্মীকে প্রসন্ন করতে পুজোর বেদীর পাশে কয়েন বা মুদ্রা রাখাও ভালো বলে মনে করা হয়। অনেকে সোনার গয়নাও রাখেন। এতে সংসারে অর্থলাভ হয় বলেই বিশ্বাস।
তিন) লক্ষ্মীপুজোর রাতে দেবী লক্ষ্মীর বেদীর পাশে কড়ি রাখাই নিয়ম। এতে সংসারের সমস্ত আর্থিক কষ্ট দূর হয়।
চার) ঘরের দুয়ারে দেবী লক্ষ্মীর পায়ের আলপনা আঁকতে হয়। এখন অবশ্য স্টিকার আলপনাও কিনতে পাওয়া যায়। আলপনায় আঁকা থাকে দেবী লক্ষ্মীর পদচিহ্ন।
পাঁচ) দেবী লক্ষ্মীর ১০৮ নাম জপ করাও শুভ বলে মনে করা হয়। সঙ্গে, লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়তে হয়।
ছয়) সাদা বা কালো কাপড় এড়িয়ে ব্যবহার করুন লাল অথবা গোলাপি রঙের আসন।
সাত) ঢাক, ঢোল, কাঁসর, ঘণ্টা না-বাজিয়ে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি দেওয়াই নিয়ম।
আট) রাত জাগতে পুজো শেষের পর পাশা খেলাও এই পুজোর নিয়ম।
নয়) লক্ষ্মীপুজোয় তুলে রাখা চাল কোনওভাবে ব্যয় না-করে জমিয়ে রাখাই নিয়ম।
ফুল ও ফল
শাস্ত্র মতে গাঁদা ফুল ভগবান বিষ্ণুর প্রিয়। দেবী লক্ষ্মীও তাই গাঁদা ফুলে প্রসন্ন হন। এছাড়াও লাল, হলুদ, গোলাপি রঙের ফুল লক্ষ্মীপুজোয় ব্যবহার করা হয়। দেবীর আরাধনা করা হয় শ্বেতপদ্ম ও শ্বেত চন্দন দিয়ে। নারকেল দেবী লক্ষ্মীর প্রিয় ফল। একে শ্রীফলও বলে। ভোগ হিসেবে দেবী লক্ষ্মীকে নারকেলের নাড়ু, কাঁচা নারকেল অর্পণ করা হয়। এছাড়াও পানি ফল, পদ্মবীজ বা মাখানাও দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- শনিবার কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো, জানুন শুভক্ষণ-তিথি
লক্ষ্মীপুজোয় সরা
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় প্রতিমা, সরা, থোড়ের নৌকো ইত্যাদি- নানা কিছুর ব্যবহার প্রচলিত। তার মধ্যে সরার ক্ষেত্রে ঢাকাই সরা, ফরিদপুরি সরা, সুরেশ্বরী সরা এবং শান্তিপুরী সরার প্রচলন বেশি। এরাজ্যে নদিয়ার তাহেরপুর, নবদ্বীপ এবং উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় লক্ষ্মীসরা তৈরি হয়, আঁকা হয়। অঞ্চলভেদে সরায় তিন, পাঁচ, সাতটি পুতুল আঁকা থাকে। যাতে থাকে লক্ষ্মী, জয়া বিজয়া, রাধাকৃষ্ণ বা সপরিবার দুর্গা ইত্যাদি। তার মধ্যেও আবার নানা ভাগ আছে। ফরিদপুরী সরায় যেমন দেবদেবীরা চৌখুপির মধ্যে থাকেন। সুরেশ্বরী সরায় আবার ওপরের অংশে আঁকা হয় দেবী মহিষমর্দ্দিনীকে। নীচে থাকেন সবাহনা লক্ষ্মী।