নবরাত্রির চতুর্থ দিনে আরাধনা করা হয় দেবী কুষ্মাণ্ডার। আশ্বিন ও চৈত্র মাসের নবরাত্রির শুক্লা চতুর্থী তিথিতে দেবী কুষ্মাণ্ডার আরাধনা করেন ভক্তরা। শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী কুষ্মাণ্ডা হলেন আদিশক্তির হিরণ্যগর্ভা স্বরূপ। এর মধ্যে কু শব্দের অর্থ হল ছোট। উষ্মার অর্থ আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক তাপ বা ত্রিতাপ।
এই ত্রিতাপ যিনি অণ্ডে বা নিজের উদরে ধারণ করেন, তিনিই দেবী কুষ্মাণ্ডা। ভক্তরা মনে করেন, মহাদেবী তাঁর এই হিরণ্যগর্ভা রূপে জগৎকে সৃষ্টি করেছিলেন। তাই তিনি মহাবিশ্বের স্রষ্টা। আবার, একাংশের মত যে এই দেবীকে পূজা করতে কুমড়ো বলি দিতে হয়। তাই দেবীর নাম কুষ্মাণ্ডা।
দেবী কুষ্মাণ্ডার বাস সূর্যের কেন্দ্রে। তিনিই সূর্যের শক্তি গোটা জগৎ-এ ছড়িয়ে দেন। উপশম করেন যাবতীয় রোগ-ব্যাধি ও শোকের। তাঁর অসাধারণ দিব্য সৌন্দর্য ও অনন্য সুন্দর হাসিতে বিশ্বের অন্ধকার দূর করেন। সূর্যের মতই দেবীর প্রচণ্ড তেজ। তিনি সিংহবাহিনী। সূর্য, তারা ও নক্ষত্রমণ্ডলীর স্রষ্টা। দেবী সৌন্দর্য ও সাহসের প্রতীক।
আরও পড়ুন- নবরাত্রির তৃতীয় দিনে আরাধনা হয় দেবী চন্দ্রঘণ্টার, এই দেবীর আরাধনায় কী মেলে
চতুর্থীর দিন দেবী ঘন নীল রঙের পোশাক পরেন বলেই মনে করা হয়। দেবীর আটটি হাত। এই আট হাতে রয়েছে চক্র, গদা, তির, ধনুক, জপমালা, শতদল বা পদ্ম, একটি কলসি ও কমণ্ডলু। দেবীর এই স্বরূপ দিব্যজ্যোতি, প্রতাপ, মাতৃত্ব, করুণা, দুঃখহারিণী, অনুশাসন ও প্রাণশক্তির প্রতীক।
নবরাত্রির চতুর্থীতে দেবী কুষ্মাণ্ডার পূজা ও ব্রতপাঠ করলে আরোগ্য, আয়ু, যশ ও বল লাভ হয়। দেবী তাঁর আরাধনাকারীকে সামাজিক সম্মান, শ্রদ্ধা, খ্যাতি দান করেন। তাঁর আরাধনায় জীবন থেকে যাবতীয় অশুভ শক্তি দূর হয়। বারাণসীতে দেবী কুষ্মাণ্ডার মন্দির রয়েছে। কথিত আছে তিনিই কাশী বা বারাণসীর দক্ষিণ দিকের রক্ষাকারিণী।
নবদুর্গার অন্যান্য মন্দিরের তুলনায় বারাণসীর কুষ্মাণ্ডা মন্দির অনেকটা বড়। এর অনেকগুলো চূড়াও রয়েছে। দেবীর মন্দিরটি লাল পাথরের তৈরি। মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবী প্রতিমাটি পশ্চিমমুখী ও দু'হাত উঁচু। এই মন্দিরের সামনেই রয়েছে বারাণসীর বিখ্যাত তীর্থ দুর্গাকুণ্ড। আশ্বিনের ও চৈত্রের নবরাত্রির চতুর্থীতে এই মন্দিরে ব্যাপক ভক্তসমাগম হয়।