দেবী কালী অশেষ কৃপাময়ী। আপদে-বিপদে তিনিই ভক্তের রক্ষাকর্ত্রী। এই বাংলায় বহু ভক্তই তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবের কথা জানেন। অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করেন। এরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তাই গড়ে উঠেছে অসংখ্য কালী মন্দির। তার প্রায় সব মন্দিরেই কমবেশি নিত্যপুজো হয়। কিন্তু, অতীতে যেখানে দেবীর বিশেষ কৃপা ভক্তরা লাভ করেছেন, তেমন মন্দিরের সংখ্যা কিন্তু হাতেগোনা। অবশ্য, তেমন মন্দির আশপাশে আছে জানলেও, অনেক ভক্ত সেকথা প্রকাশ্যে বলেন না। যদিও বা বলেন, তো অত্যন্ত ঘনিষ্ঠদের।
রাজ্যের জেলাগুলোতে তেমন জাগ্রত মন্দিরের বেশ কয়েকটির নাম অবশ্য অনেকেই ইতিমধ্যে শুনেছেন। তার মধ্যে সতীপীঠগুলোয় ভক্তদের ভিড় এখন যথেষ্ট। কিন্তু, এই শহর কলকাতাতেই রয়েছে দেবীর জাগ্রত মন্দির। যেখানে প্রার্থনা করলে দেবী নাকি ভক্তদের ফেরান না। এমন এক মন্দিরের নাম নিস্তারিণী কালী মন্দির। সমস্যা জর্জরিত অবস্থা থেকে দেবী নিস্তার বা মুক্তি দেন বলেই এই মন্দিরের নাম নিস্তারিণী কালী মন্দির।
উত্তর কলকাতার হেদুয়া পার্ক অনেকেই চেনেন। সেই হেদুয়ার জলাশয়কে ডান দিকে রেখে বিধান সরণির বাঁ দিকের ফুটপাথ ধরে হাতিবাগানের দিকে হাঁটতে হবে। কিছুদূর গেলেই চোখে পড়বে অত্যন্ত নামী তেলেভাজার দোকান লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্স। তার লাগোয়া গলি বৃন্দাবন বসু লেন। ওই গলিতে ঢুকে কয়েক হাত এগোলেই ডান দিকে চোখে পড়বে নিস্তারিণী কালী মন্দির। অনেকে আবার এই কালী মন্দিরকে গোহোদের কালী মন্দির বলে জানেন।
আরও পড়ুন- কলকাতার কৃপাময়ী কালী, যেখানে এসে মনস্কামনা পূরণ করে যান দূর-দূরান্তের ভক্তরা
এখানকার মন্দির দক্ষিণমুখী, উঁচু বেদির ওপর তৈরি। গর্ভগৃহে শ্বেতপাথরের সিংহাসনে থাকা দেবী নিস্তারিণীর বিগ্রহ কষ্টিপাথরে তৈরি। এই মন্দির ১৮৫০ (১২৫৭ বঙ্গাব্দ) সালে তৈরি করিয়েছিলেন শিবচন্দ্র (শিবচরণ) গোহো। মন্দিরের বাঁ দিকে রয়েছে একটি আটচালা শিবমন্দির। যেখানে পূজিত হন কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ 'শান্তিনাথ'।
কথিত আছে, দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মূর্তি তৈরি করেছিলেন, পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার দাঁইহাটের শিল্পী নবীন ভাস্কর। তিনিই তৈরি করেছিলেন 'নিস্তারিণী' কালীর বিগ্রহও। এখানে ঐতিহ্য অনুযায়ী পুরোনো রীতি মেনেই চলে যাবতীয় পুজোপাঠ। মন্দিরে তিন জন পুরোহিত পুরুষানুক্রমে পূজা করেন। প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৪টায় মন্দির খোলে। খোলা থাকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। বিকেলেও মন্দির খোলে সাড়ে ৪টায়। খোলা থাকে রাত ৯টা পর্যন্ত।