'যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।' পুরোনো প্রবাদ ভেবে উড়িয়ে দিচ্ছেন? আচ্ছা বেশ, অন্য প্রবাদে যাওয়া যাক। যেমন, 'ওল্ড ইজ গোল্ড'। ছাই থেকে রতন না পেলেও পাবেন সোনা। বিশ্বাস হচ্ছে না তো? তবে আপনাকে সকাল সকাল চলে যেতে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট কিংবা বড়বাজারের সোনা পট্টিতে। মাঝবয়সী থেকে শুরু করে ছোকরা বা বৃদ্ধ, সকলে যেখানে ব্যস্ত ধুলো কুড়োতে।
একটু খোলসা করে বলা যাক। এই ধুলোতে সত্যি সত্যি লুকিয়ে আছে সোনা। বৌবাজার মূলত পরিচিত সোনাপট্টি হিসেবে। রাস্তার উপর সারি সারি সোনার দোকান থাকলেও ঘুপচি গলিগুলোতে রয়েছে সোনার কারিগরদের বাস। সকাল থেকে সন্ধ্যে এসব কারিগর কাজ করে যান, সে সোনা কাটা হোক, বা গয়না তৈরি, বা পালিশ। এই কাজ করার সময় সোনার গুঁড়ো মাটিতে পড়ে ধুলোয় মিশে যায়। অবশ্যই সেই গুঁড়ো সহজে চোখে দেখা যায় না। মূলত দোকান ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার করার সময় ধুলোর সাথে তা মিশে যায়। আর এই ধুলো কুড়োতেই সকাল থেকে অনেকে জড়ো হন।
আরও পড়ুন- Kolkata Air Quality: দেশ তাকিয়ে দিল্লির দিকে, কিন্তু দূষণ শিরোমণি আসলে কলকাতা
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে ছোট গামলা, প্লাস্টিকের জাগ, ঝাঁটা, লোহার ব্রাশ নিয়ে কারিগরদের দোকানের সামনে হাজির হয়ে যান তাঁরা। ভোরবেলা থেকে সকাল এগারোটা-বারোটা পর্যন্ত ধুলো জমানোর কাজ করেন। যিনি যত বেশি ধুলো জমাতে পারবেন, তাঁর তত বেশী লাভ।
বছর তিরিশের মহম্মদ আশফাক গত পনেরো বছর ধরে এই কাজ করছেন। এটাই তাঁর মূল রোজগারের উপায়। এভাবে ধুলো থেকে সোনার গুঁড়ো আলাদা করে নিয়ে তাই বেচে রোজ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা উপার্জন হয়ে যায়। আশফাকের মতনই আরেকজন কামাল। বয়স ১৯ বছর। গত তিন বছর ধরে ধুলো কুড়োচ্ছে। আগে দোকানে কাজ করতো। তার বাড়ির পাশের একজন ধুলো কুড়োনোর বুদ্ধি দিতেই দোকানের কাজ ছেড়ে এই পেশায় চলে আসে। দোকানে কাজ করে যা উপার্জন হতো, তার থেকে বেশী উপার্জন হয় এই ধুলো কুড়িয়ে।
আরও পড়ুন- অনুব্রতর পাঁচনের পাল্টা সায়ন্তনের বড়ি, কথায় সরগরম রাজ্য-রাজনীতি
কিভাবে করা হয় ধুলো থেকে সোনা বাছাইয়ের কাজ? ভোর পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে যায় ধুলো কুড়োনো। দোকানের কোণা, ড্রেনের ধার, ইত্যাদি জায়গা থেকে ধুলো কুড়িয়ে গামলায় জমা হয়। এরপর জল দিয়ে ধুলোকে ভিজিয়ে রাখা হয় ঘণ্টা দুয়েক। জলের মধ্যে ধুলো থিতিয়ে গেলে উপর দিকে সোনার গুড়ো ভেসে ওঠে, এরপর অ্যাসিড দিয়ে আরেকবার পরিশোধিত করে সোনার গুঁড়ো আলাদা করা হয়। সেই সোনা কারিগরদের কাছে আবার বিক্রি হয়।
কাজটা বলতে যতটা সোজা, করতে ঠিক ততটাই কঠিন। তবে এই কাজ চলে আসছে বহুদিন ধরে। বৌবাজার এলাকারই কারিগর লোকনাথ। তাঁর কথায়, "এসব ধুলো থেকে পাওয়া সোনায় কোনও জালিয়াতি থাকে না। ধুলো থেকে সোনা আলাদা করতে অসীম ধৈর্য লাগে, যা সারাদিনের কাজের পর কোনও কারিগরেরই থাকে না। তার চেয়ে বরং কিছু মানুষ এই কাজ করে নিজেদের পেট চালাতে পারছেন, মন্দ কী!"