জগদ্ধাত্রী পুজোর মহাষ্টমীতেই গোপাষ্টমী বা গোষ্ঠাষ্টমী উৎসব। মহাভারতে দেবী দুর্গার সঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্কের কথা নানাভাবে ফুটে উঠেছে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় একের পর এক শিশুহত্যা চলাকালীন কংসকে শিশুকন্যা থেকে মহামায়ার রূপ ধরে ভয় দেখানো। বসুদেবকে ভয়াবহ যমুনা পারাপারে সাহায্য করা। এমন নানা ঘটনায় ভগবতী বা দুর্গার উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, পরবর্তীকালে শ্রীকৃষ্ণ নিজেও অর্জুনকে ভগবতী বা দুর্গার আরাধনা করতে সহযোগিতা করেছিলেন। তেমনই দুর্গার আরেক রূপ জগদ্ধাত্রী পুজোর অষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণের গোপাষ্টমী উৎসব।
কথিত আছে শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরাম, দুজনেরই বয়স পাঁচ বছর হয়ে যাওয়ায় নন্দ মহারাজ তাঁদের বাছুরের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। নন্দ মহারাজ বৃন্দাবনে প্রথমবার গরু চরাতে যাওয়ায় শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামের জন্য একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি রাধাও গরু চরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, মেয়ে হওয়ায় তাঁকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সেই কারণে তিনি এক ছেলের ছদ্মবেশ ধারণ করে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন গরু চরানোর দায়িত্ব পাওয়ার উৎসবে। সেই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লাষ্টমী।
এই বিশেষ দিনে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে রাধার পূজার পাশাপাশি, গোপূজন, গোগ্রাসদান ও গো প্রদক্ষিণ অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস এমনটা করলে অন্ন এবং আর্থিক সমস্যা দূর হয়। পাশাপাশি, নানা গ্রহদোষ কেটে যায়। এর সঙ্গে এই বিশেষ দিনে গীতাপাঠের রীতিও প্রচলিত রয়েছে। শাস্ত্রমতে প্রজাপিতা ব্রহ্মাই বলেছিলেন যে গীতার প্রথম অধ্যায় পাঠ করলে লোকের মন পবিত্র হয়। দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠে নির্মলতা লাভ হয়। তৃতীয় অধ্যায় পাঠে সর্বপাপ দূর হয়। চতুর্থ অধ্যায় পাঠে ব্রহ্মহত্যা ও স্ত্রীহত্যাজনিত পাপ তৎক্ষণাৎ দূর হয়। পঞ্চম অধ্যায় পাঠে চৌর্যমহাপাপ দূর হয়। ষষ্ঠ অধ্যায় পাঠে মন্দ ভাগ্য নাশ হয়। সপ্তম অধ্যায় পাঠে বুদ্ধি নির্মলতা লাভ করে। অষ্টম অধ্যায় পাঠে অখাদ্য ও অপেয়জাত সকল প্রকার পাপ দূর হয়।
আরও পড়ুন- চারদিন ধরে জগদ্ধাত্রী পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে চান? যেতেই হবে চন্দনননগর
নবম অধ্যায় পাঠে পৃথিবী দানের মত সম্পূর্ণ লাভ হয়। দশম অধ্যায় পাঠে সর্বপাপ বিনষ্ট হয়ে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান জন্মে। একাদশ অধ্যায় পাঠে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয়ে মুক্তি লাভ হয়। দ্বাদশ অধ্যায় পাঠে ভগবানের প্রতি বিশুদ্ধ ভক্তি জন্মে। ত্রয়োদশ অধ্যায় পাঠে জ্ঞানচক্ষুর বিকাশ হয়ে শক্তি লাভ হয়। চতুর্দশ অধ্যায় পাঠে অশ্বমেধাদি যজ্ঞের মহাফল লাভ হয়। পঞ্চদশ অধ্যায় পাঠে নির্মল জ্ঞান লাভ করে যোগী হওয়া যায়। ষোড়শ অধ্যায় পাঠে মানব সংসার বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। সপ্তদশ অধ্যায় পাঠে ভক্তরা রাজপেয় নামে যজ্ঞের ফল লাভ করে। অষ্টাদশ অধ্যায় পাঠে জ্ঞানরূপ অগ্নিতে পাঠকারীর পাপ দূর হয়।