এই বাংলা বিশ্বাস করে, যত মত তত পথ। সেই কারণে ঈশ্বর আরাধনার পথের বিভিন্নতা নিয়ে এই বাংলার কোনও রাগ নেই, অভিমানও নেই। বরং, শৈব থেকে বৈষ্ণব, শাক্ত থেকে গাণপত্য- ঈশ্বর আরাধনার সব পথকেই বাংলা আপন করেছে। তাই এখানে নানা ধর্ম বা সম্প্রদায় বিকশিত হয়েছে। পরস্পরের থেকে পৃথকভাবে হওয়া সেই বিকাশ প্রতিটি সাধনাকেই দিয়েছে পরিচয়ের সিদ্ধি।
এমনই এক পরিচয়ের আধার হিসেবে বহুকাল ধরে বিরাজ করছে উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের গোপীনাথ মন্দির। ১৯০৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, পরাধীন ভারতে ইংরেজ গভর্নর জেনারেল জন এলিয়ট ও তাঁর স্ত্রী এসেছিলেন এই মন্দিরে। যা বুঝিয়ে দেয়, এই মন্দিরের খ্যাতি সেই আমলেও ঠিক কতটা ছিল । কিছুকাল আগেও মন্দিরের সামনের রাস্তায় ঝুলন উৎসবকে কেন্দ্র করে একমাস ধরে চলত মেলা। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করেই ঝুলন তার সমারোহের পূর্ণতা পেত।
মন্দিরের গর্ভগৃহে নিত্য পুজো গ্রহণ করেন কষ্টিপাথরের প্রভু গোপীনাথ ও অষ্টধাতুর রাধারানি। এর গর্ভগৃহের মেঝে শ্বেতপাথরের। তার সামনে অলিন্দ। যা তৈরি হয়েছে নকশা কাটা পাথরে। মন্দিরের সামনে রয়েছে ফাঁকা উঠোন। যাকে ঘিরে আছে পুরোনো আমলের জমিদার বাড়ির কায়দায় বেশ কয়েকটি ঘর। মন্দিরের ছাদ সমতল, পূর্বমুখী দালানের হলেও এর অলিন্দের সামনে রয়েছে টিনের ছাউনি।
আরও পড়ুন- এই বাংলার মন্দির, যেখানে অশান্ত মন শান্ত হয়ে যায় বলেই বিশ্বাস ভক্তদের
শিয়ালদহ-নৈহাটি শাখার ইছাপুর স্টেশনে নেমে অটো বা টোটোয় পৌঁছনো যায় গোপীনাথ মন্দিরে। জায়গাটা নবাবগঞ্জের শ্রীধর বংশীধর রোডে। এই রোড উত্তর ২৪ পরগনার ম্যাজিস্ট্রেটের অনুরোধে শ্রীধর মণ্ডল ও বংশীধর মণ্ডল তৈরি করে দিয়েছিলেন। তাই রাস্তার নাম শ্রীধর বংশীধর রোড। বাংলার ১২৫৭ সালের ২৭ আষাঢ়, শ্রীধর ও বংশীধর মণ্ডল মিলেই তাঁদের নামে প্রচলিত রাস্তার পাশে এই গোপীনাথ মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন। যা সেই গোড়ার দিন থেকে বাংলার বৈষ্ণবদের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হয়ে রয়েছে।