এই বাংলায় এমন বহু ধর্মস্থান রয়েছে, যাদের কথা খুব কম লোকই জানেন। হয়তো এলাকাবাসী জানেন। কিন্তু, সেটাও পুরোটা না। অথচ, দেখা যাবে সন্তমহলে সেই ধর্মস্থানের দারুণ কদর। প্রতিবছর যখন নির্দিষ্ট উৎসব-অনুষ্ঠান হয়, তখন দলে দলে সন্তরা সেই জায়গায় এসে ভিড় করেন। তাতে, অনেকেই অবাক হয়ে যান! ভাবেন, ওহ্! বাবা, এত লোক আবার কোথা থেকে এল। কিন্তু, ছবিটা বছরের পর বছর একই থাকে। বিশেষ করে সন্তরা যেখানে যান আগামী বছর সেই জায়গায় তাঁরা ফের গিয়ে থাকেন। এমনভাবেই তাঁরা অভ্যস্ত।
এমন একটি জায়গা হল গোরক্ষবাসলি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় কিন্তু, কলকাতার খুব কাছে এই তীর্থস্থান। দমদমের এই জায়গায় নাথযোগী সম্প্রদায়ের আনাগোনা বহু প্রাচীন কাল থেকে। প্রতিবছর গাজন ও শিবরাত্রির সময় কোথা না-কোথা থেকে নাথযোগীরা এখানে চলে আসেন। চলে, বিশেষ উৎসব ও অনুষ্ঠান। মাঘী পূর্ণিমাতেও এখানে খুব বড় আকারে মেলা হয়। এখানে রয়েছে মন্দির। যাতে রয়েছে গোরক্ষনাথ, মৎস্যেন্দ্রনাথ এবং দত্তাত্রেয়র মূর্তি। মূর্তিগুলোর পরনে রয়েছে গেরুয়া বসন, কানে কুণ্ডল। এই মন্দিরের উত্তর-পশ্চিমে একটি ত্রিশূল পোঁতা রয়েছে। তার পাশে আবার সর্বক্ষণ ধুনী জ্বালানো থাকে। সেই ধুনী নেভে না।
আরও পড়ুন- দুই শতাব্দীরও প্রাচীন জাগ্রত শিবমন্দির, দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন ভক্তরা
মন্দিরের ভিতরে মহর্ষি কপিলাচার্যের শ্বেতপাথরের একটি ছোট মূর্তি আছে। উলটোদিকে আছে ভৈরব, বিষ্ণু, হনুমান, কালী, মনসা এবং শিবের মন্দির। ভিতরে বাগানের মধ্যে রয়েছে যোগীদের ছোট কয়েকটি সমাধি এবং বড় একটি লাল সমাধি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন না, এই মন্দির ঠিক কত পুরোনো। লোকশ্রুতি যে স্বয়ং কপিলমুনিও নাকি এখানে সাধনা করতেন। পরবর্তী সময়ে গোরক্ষনাথ এসে এখানে ধুনী জ্বালিয়েছিলেন।
সেই গোরক্ষনাথ, যাঁর নামে নামকরণ হয়েছে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের। তাঁর সেই ধুনীর আগুনই নাকি এখনও এখানে জ্বলছে। শুধু উত্তরপ্রদেশেই না। নেপাল ও সিকিমে গোরক্ষনাথের নামে বহু মন্দির ও মঠ রয়েছে। গোরক্ষনাথ এসেছিলেন বলেই নাকি এই জায়গাটির নাম গোরক্ষবাসলি। তবে, গোরক্ষনাথ আসুন ছাই না-আসুন, এখানে যে তাঁর সম্প্রদায়ের সাধুরা ছিলেন, তার প্রমাণ আজও বহন করে নিয়ে চলেছে দমদমের এই অঞ্চল।