শহর কলকাতা। একসময় ভারতের রাজধানী। এখন পশ্চিমবঙ্গের হলেও, যার গুরুত্ব একছটাকও কমেনি, অন্তত সংস্কৃতির দরবারে। সেই সংস্কৃতির মধ্যে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে ধর্মীয় সংস্কৃতিও। বাস্তববাদ, নাস্তিকতার ধর্মপালনের মধ্যেও শহর কলকাতার মানুষ আস্তিকতাকে গোপনে আগলে রেখেছেন। কখনও গোপনে, কখনও প্রকাশ্যে, কখনও পর্যটনের ছলে তাঁরা ধর্মাচরণ পালন করে চলেছেন।
তেমনই এক নতুন পর্যটনস্থল বা পর্যটনের কেন্দ্র পেয়ে গিয়েছে এই শহর। কলকাতার ভৌগলিক সীমানা ছাড়িয়ে একটু এগোলেই দেখা মিলবে এই পর্যটন কেন্দ্র কাম ধর্মস্থানের। যে ধর্মস্থানের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছেন ভগবান মহাবীর হনুমান। যাঁকে রাজস্থানের দৌসা জেলায় বালাজি নামেও ভক্তরা ডেকে থাকেন। সারা ভারত থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত সেই বালাজি মন্দিরে যান। ওই মন্দিরের বিশেষত্ব, সেখানে নাকি ভূত ছাড়ান হয়। কোনও আপদ-বিপদ থাকলে, সেই ফাঁড়া কাটিয়ে দেওয়া হয়।
সাধারণত ভগবান হনুমানের যে ছবি আমরা বেশিরভাগ সময় দেখি, তার সঙ্গে অবশ্য বালাজি হনুমানের ছবির মিল বেশ কম। এখানে হনুমানের মুখে কালো গোঁফ আর দাড়ি। দৌসার সেই ভারতবিখ্যাত হনুমান মন্দিরের যেন আরেকটা শাখা তৈরি হয়েছে ডোমজুড়ের কাছে সলপে। এখানেও পূজ্য হনুমানজির গোঁফ-দাড়ি আছে। বিরাট এলাকাজুড়ে তৈরি এই মন্দিরে বয়স্কদের জন্য লিফটের ব্যবস্থা আছে। হনুমানজির সঙ্গেই রয়েছে রাম, লক্ষ্মণ, সীতা, রাধাকৃষ্ণ আর গণেশের পুজোর ব্যবস্থা।
হনুমানজির নামে উৎসর্গীকৃত এই মন্দিরে ভগবান বালাজির বিভিন্ন রূপের মূর্তি তুলে ধরা হয়েছে। মন্দিরের দেওয়ালে বর্ণনা করা হয়েছে রামায়ণের নানা কাহিনি। সন্ধ্যার পরে এই মন্দির সেজে ওঠে বিশেষ আলোকসজ্জায়। এই সব আধুনিকতাকে বাদ দিলে, এই মন্দিরের বিশেষত্ব- এখানে বিপদ-আপদ, ভূতের ভয় দূর করার জন্য বিশেষ পুজোপাঠের ব্যবস্থা রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে অনন্ত ধুনির ব্যবস্থা। যে ধুনির আগুন কখনও নেভে না। দৌসার মন্দিরের মত এখানেও ভগবান হনুমানজিকে মানত করার জন্য নারকেল দেওয়া হয়। ঘড়ি ধরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয় সন্ধ্যা আরতি।
আরও পড়ুন- একমাসের মধ্যে পূর্ণ হয় মনস্কামনা, বহু দুরারোগ্য ব্যাধি সারে এই সতীপীঠে
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভক্তরা এই মন্দিরের নাম দিয়েছেন সালাসার পাকুরিয়া ধাম। সলপ হাইরোডের পাশে সরু রাস্তা। তার পাশেই মন্দির। বালি হল্ট থেকে সলপের দিকে বাস ধরে কন্ডাক্টরকে বলতে হবে 'পাকুরিয়া যাব'। কাছাকাছি বাসস্ট্যান্ড বলতে সলপ মোড়। সেখান থেকে টোটোয় চেপে মন্দিরে যাওয়া যায়। সকাল ৫টা ৩০ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই মন্দির খোলা থাকে। বিনামূল্যে জুতো খুলে রাখার ব্যবস্থা আছে এখানে। বিনামূল্যেই আবার খিচুড়ি থেকে অন্যান্য প্রসাদ দেওয়া হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, মন্দিরটি অত্যন্ত জাগ্রত। যেখানে গিয়ে প্রার্থনা করলে হনুমানজি ভক্তের মনস্কামনা পূরণ করেন। পূরণ হলে, আরেকবার গিয়ে হনুমানজিকে এখানে নারকেল দিয়ে পুজো দিতে হয়।