গত দুই বছরে চিকিৎসার মারপ্যাঁচে অসহায় জীবনযাত্রা! ওষুধ, ভিটামিন সি, সঙ্গে ইমিউনিটি বাড়ানোর দৌড়, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এক্কেবারে হ-য-ব-র-ল। সুস্থ থাকার প্রচেষ্টা যেমন এক, তবে করোনা আক্রান্ত বা করোনা জয়ীদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন বেশ কিছুটা এসেছে বলেই জানা যাচ্ছে। তবে এর মধ্যেও রয়েছে নানান বিভ্রাট! চিকিৎসা শাস্ত্রের নানান বিব্রতকর প্রয়োগ মানুষের জীবন তথা শরীরের সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে অবিরাম। চিকিৎসকদের মতে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দিলে তাদের সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। কোভিড রোগীদের অন্যান্য সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার কেবল অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি করছে, যাতে উদ্বেগ ক্রমশই বাড়ছে।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স, শরীরের কোনও উপকারে তো লাগেই না বরং নানান ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণুর ক্ষমতা উল্টে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক জানানো হয়েছে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বা এএমআর তখনই ঘটে যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবী সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয় এবং ওষুধের কাজ দেয় না। সংক্রমণের চিকিৎসা করা কঠিন করে তোলে এবং রোগের বিস্তার, গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। সুতরাং এই জীবাণুগুলি এক বা একাধিক শ্রেণির অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পদার্থের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে, যার ফলে ওষুধ ব্যর্থ হয়। এই ধরনের প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস চিকিৎসা পরিসরে, বিশেষ করে আইসিইউ চিকিৎসায় সংক্রমিত রোগীদের জন্য নেতিবাচক ফলাফলের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
আদৌ, কোনও রোগীকে কী ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে সব ওষুধের প্রভাব যেহেতু সমান নয় সেসব দিক বিবেচনা করে ২০১৩ সালে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)-এর পক্ষ থেকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড রিসার্চ নেটওয়ার্ক (AMRSN) প্রতিষ্ঠা করা হয়। যাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের উপর ভিত্তি করে ছয়টি প্যাথোজেনিক গ্রুপের তথ্য সংকলন করা হয়। দেশব্যাপী পরিচালিত ব্যাপক নজরদারির পর, হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের উন্নতির জন্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল স্টুয়ার্ডশিপ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছিল। মানুষের স্বার্থে এই প্রচেষ্টা নেওয়ার পর নানান হাসপাতালে তা কার্যকর করা হয়।
তবে কোভিড পরিস্থিতিতে অবস্থা বেশ শোচনীয়! অ্যান্টিবায়োটিকের অনৈতিক ব্যবহার মানবদেহে নানান সমস্যার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। ডা: সুরঞ্জিত চ্যাটার্জি, সিনিয়র কনসালটেন্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন, ( ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতাল, নয়াদিল্লি ) জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীদের দেহে নিজে থেকেই সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন তৈরি হয়, যার জন্য কখনও কখনও দীর্ঘমেয়াদে উচ্চমানের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার প্রতিরোধের বিকাশের দিকে পরিচালিত করে। যা স্বল্পপরিসরে লাভজনক হয়। রেজিস্ট্যান্স যদি বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে ব্যাকটেরিয়াও শরীরের ভেতরে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ইনফেকশন বেড়ে যায়। উপলব্ধ অ্যান্টিবায়োটিকগুলি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের ক্ষমতা নির্জীব করতে ব্যর্থ এবং নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের অভাব রয়েছে। তাই মানবদেহের এরকম অবনতি ঘটে চলেছে।
তা বলে, নিজেই নিজের চিকিৎসা কিন্তু একদমই করবেন না। এটি কিন্তু মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। অনেকেই স্বল্প উপসর্গে নিজেই নিজের চিকিৎসা করতে পছন্দ করেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেলে বেশিরভাগ সময়ই সেই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া তো সম্ভব নয়ই বরং পরবর্তীতে তা আরও বৃদ্ধি পায়। যেই কারণে স্বচিকিৎসা একেবারেই করবেন না ;
- অসুস্থতার ভুল নির্ণয় এবং ভুল থেরাপি
- ফার্মাকোলজিকাল ঝুঁকি চিনতে ব্যর্থতা যার ফলে মারাত্মক প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়
- সঠিক এবং তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা পরামর্শ নিতে ব্যর্থতা
- ডুপ্লিকেট ওষুধ যা ক্ষতিকারক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে
- অপর্যাপ্ত বা অতিরিক্ত ডোজ অপব্যবহারের ঝুঁকি
- খাদ্য এবং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- ভুল রোগ নির্ণয়ের কারণে মানসিক প্রভাব
- অনলাইন পরীক্ষা ভুল হতে পারে
আরও পড়ুন সাবধান! এই ৫টি অভ্যাস কমিয়ে দেবে আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা
তবে সমস্যা যেমন আছে, তার কিছু সমাধান অবশ্যই থাকবে। প্রথমেই রেজিস্ট্যান্স কম করতে স্বচিকিৎসা বন্ধ করা উচিত। কেবলমাত্র একজন ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিকের উপর নির্ভর করা উচিত। সংক্রমণের প্রকৃত কারণ শনাক্ত করার পর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত। ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের পরিবর্তে, নির্দিষ্ট প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে নির্দেশিত, লক্ষ্যযুক্ত ডোজ ব্যবহার করা উচিত। এবং যখন সংক্রমণ সেরে যায়, দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করার পরিমাপ কম করা উচিত। এর বাইরে, সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করার চেষ্টা অবশ্যই করা উচিত।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন