Advertisment

সজনে শাক, অপুষ্টি এবং ভারতের সত্তর পেরনো স্বাধীনতা

মোরিঙ্গা, নাম দিয়ে একবার গুগলে নমো নমো করে সার্চ দিয়েই দিন না। হাজারটা ই কমার্স সংস্থা আপনার দরজায় পৌঁছে দেবে মোরিঙ্গা সিরাপ, ট্যাব্লেট, ক্রিম, ক্যাপ্সুল আরও কত কী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সজনে গাছ। ছবি-ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা

বাড়ির একেবারে আশেপাশে অযত্নে বেড়ে ওঠা জিনিসের মর্ম আমরা বুঝিনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। বিদেশিরা কদর করার পাশ্চাত্যের মোড়কে এ দেশে এলে তবেই তা ব্যবহারোপযোগী হবে। এ যেন কেমন নিয়মই হয়ে গিয়েছে। তাই অ্যামাজনে 'কাউ ডাঙ' বিক্রি হয় হটকেকের মতো। সজনে শাকের ক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছে। যতক্ষণ পরিচয় ওই সজনে শাক হিসেবে, ততক্ষণ তেমন কদর কই? যেই না শুনি 'মোরিঙ্গা ভেজিটেবল পাউডার' তৎক্ষণাৎ নড়েচড়ে বসি। মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা জটায়ু সুযোগ পেলে প্রায় বলেই বসে 'আপনাকে তো মশাই কালটিভেট করতে হচ্ছে'। বিদেশি পোশাকি নামের ('মোরিঙ্গা ভেজিটেবল পাউডার') আগে একটা 'পিওর' বসে গেলে শিওর হয়ে যাই অথেনটিসিটি নিয়ে।

Advertisment

মোরিঙ্গা, নাম দিয়ে একবার গুগলে নমো নমো করে সার্চ দিয়েই দিন না। হাজারটা ই-কমার্স সংস্থা আপনার দরজায় পৌঁছে দেবে মোরিঙ্গা সিরাপ, ট্যাব্লেট, ক্রিম, ক্যাপ্সুল আরও কত কী। হ্যাঁ, আপনার কলপাড়ের কাছে যে সজনে গাছ হয়ে আছে, সেই সজনে পাতাই সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার থেকে প্যাকেজ হয়ে আসবে আপনার হাতে, 'সুপার ফুড' হিসেবে যার কয়েক গ্রামের দাম হাজার টাকারও বেশি! ডেলিভারি বয়ের কাছ থেকে নেওয়া মোড়কটি খোলার সময় আপনার ছাতি ফুলে ছত্রিশ।

আরও পড়ুন, দেশের স্বাধীনতা দিবস ১৫ অগাস্ট, তবে বাংলার কিছু অঞ্চলে নয় কেন?

প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিতামিন সি, ভিটামিন বি ১২, আয়রণ, ম্যাগ্নেশিয়াম সমৃদ্ধ সজনে শাক কোন কোন দেশে সবচেয়ে বেশি জন্মায়, জানেন? ভারত এবং আফ্রিকা। অথচ এই দুই দেশেই অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি এই সজনে শাক নিয়ে গবেষণা করেছেন শ্রীমতী মৌ সেন এবং গৌতম সাহা ( ভুবনেশ্বর ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজির শিক্ষক) । পেশাগত ভাবে শ্রীমতী সেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প এবং বস্ত্র দফতরের যুগ্ম আধিকারিক।

শ্রীমতী সেনের গবেষণা এবং সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য, যা বলে ভারতের মতো দেশে শিশুদের সজনে শাক খাওয়ালেই অনেকটা পুষ্টিলাভ সম্ভব। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মায়েদের কাছে এইটুকু মাত্র তথ্য পৌঁছয়নি বলেই শিশুমৃত্যুর হারের শীর্ষে আমাদের দেশ। ঘানা বা, জাম্বিয়াতেও এখন মোরিঙ্গা বা সজনে শাকের এই বহুবিধ গুণ কাজে লাগিয়ে অপুষ্টি দূর করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু ভারতে সজনে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র সচেতনতা এবং সরকারি উদ্যোগের অভাবে অপুষ্টির সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে যেতে হচ্ছে এই একুশ শতকেও।

আরও পড়ুন, কীভাবে আমরা পেলাম আমাদের পতাকা?

এই প্রসঙ্গে মৌ সেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়েছেন, "মিড ডে মিলের খাওয়ারে যদি ডালের মধ্যে একটু সজনে পাতা দিয়ে দেওয়া যায়, অথবা বাচ্চাদের যদি একটু নিয়মিত মোরিঙ্গার স্যুপ খাওয়ানো যায়, তাহলেও আশাপ্রদ ফল পাওয়া যাবে। সজনে গাছের ফলনের জন্য ভারতের মতো দেশের জল হাওয়া খুব উপযোগী। আলাদা করে কোনও যত্নও নিতে হয় না। স্থানীয় যেকোনো স্বনির্ভর গোষ্ঠী (সেলফ হেল্প গ্রুপ) কে দিয়ে যদি মা এবং শিশুদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করা যায়, একই সঙ্গে ছোট ছোট গোষ্ঠীর কর্ম সংস্থান হয় (সজনে পাউডারের উৎপাদনের দায়িত্ব স্বনির্ভরগোষ্ঠীগুলোকে দেওয়া যেতে পারে), অর্থনৈতিক সাচ্ছল্য বাড়ে, পাশাপাশি স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও অপুষ্টিতে ধুকতে হয়না দেশের অধিকাংশ সদ্যোজাত এবং শিশুদের"।

সদ্য পেরিয়ে এলাম ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবস। দেশপ্রেমের গানে, গল্পে ভরে থাকল একটা দিন। কিন্তু সে দিনেও সব ঘরে হাঁড়ি চড়েনি, সব মায়েরা সন্তানের মুখে তুলে দিতে পারেন নি অন্ন। অথচ সুজলা সুফলা এই দেশে এত সুযোগ রয়েছে। একটু একটু করে সচেতন করে তোলা যায় না একটা গোটা দেশকে? যাতে আগামী ১৫ আগস্টগুলোতে কেউ অভুক্ত না থাকে?

health cheap food
Advertisment