অতিমারীর প্রথম থেকেই ভাইরাসের প্রভাবে মানুষের জীবন আতঙ্কিত। নানান সময় চিকিৎসকরা জানিয়েছেন হাই ব্লাড সুগার, হৃদরোগ এবং ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তার মধ্যে হাই ব্লাড সুগার রোগীদের আতঙ্ক সর্বাধিক। রক্তে অত্যধিক গ্লুকোজের মাত্রা শরীরে বাসা বাঁধতে সাহায্য করে ভাইরাসকে।
চিকিৎসকদের মতামত অনুযায়ী, ডায়াবেটিক রোগীদের ভ্যাকসিনেশন যত দ্রুত সম্ভব গ্রহণ করা উচিত। কারণ একমাত্র টিকাগ্রহণ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবে। তবে শুধুমাত্র টিকা গ্রহণ করলেই সব সমস্যার মুক্তি এমন কিন্তু একদমই নয়। ভ্যাকসিন গ্রহণের পর নিজেকে যথেষ্ট সতর্ক রাখতে হবে। খাবার দাবার, প্রতিদিনের ওষুধ এবং নিত্য নিয়মাবলী সবকিছুই মেনে চলতে হবে। এমনিতেই, ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে খাবারের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সব রকমের খাবার তাদের শরীরের পক্ষে উপযুক্ত নয়। এমন কিছু খেতে হবে যা কম শর্করা যুক্ত কিন্তু প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং প্রোটিন দুই-ই বিদ্যমান। ডা. অনিল রেড্ডি ( সিনিয়র ডায়াবেটিক স্পেশালিস্ট, লর্ড হসপিটাল ) জানান, রক্তে গ্লুকোজের স্তর স্থিতিশীল রাখতে এবং অনাক্রমতা বৃদ্ধি করতে ডায়েটের অবশ্যই প্রয়োজন। প্রপার ডায়েট মানুষের শরীরের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভ্যাকসিন গ্রহণের পর ডায়াবেটিক রোগীদের খাবার দাবারে কিছু পরিবর্তন অবশ্যই আনা দরকার! সারাদিনের খাবারের মধ্যে মাছ, ডিম, দুধ, নানান শাক সবজি খাওয়া যেতেই পারে।
• মাছ: মাছ ওমেগা ফ্যাট সমৃদ্ধ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও, মাছ প্রদাহ কমাতে এবং সুস্থতার সামগ্রিক অনুভূতি উন্নত করতে সহায়তা করে।
• ডিম: ডিম প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে। ডিমে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিডও থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
• মুরগি: চিকেন এমন একটি খাদ্য যেটি যে কোনও রোগীদের পক্ষে উপযুক্ত। মুরগির মাংসে চর্বি কম থাকে, যা ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপযোগী। কিন্তু, প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় টিকা দেওয়ার পর সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার চিকেন খাওয়া যেতে পারে।
• ফল এবং শাকসবজি: ফল এবং শাকসবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
• হলুদ: রান্নাঘরে শুধু খাবারের রং আনতে নয়, হলুদ কিন্তু নানানভাবে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। হলুদে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কারকিউমিন যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালও এবং মানুষের মানসিক চাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে। মানুষ সাধারণত টিকা দেওয়ার আগে বা পরে মানসিক চাপে থাকে। হলুদ দুধ পান করা তাদের মানসিক চাপ কমাতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
তবে, খাদ্য ছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যাঁরা সম্প্রতি টিকা নিয়েছেন তাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তাঁরা ভালভাবে হাইড্রেটেড কিনা। করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন জ্বর, হাতে ব্যথা, দুর্বলতা এবং গাঁটের ব্যথা এড়াতে তাঁদের অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে তরল যেমন ছোলা এবং তাজা ফলের রস খেতে হবে। যদি কারও জ্বর বা গুরুতর ব্যথা হয়, তাহলে তাঁরা উপসর্গগুলি কম করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে পারে।
এ তো হল অভ্যন্তরীণ বিষয়, কিন্তু ডায়াবেটিক রোগীদের টিকা গ্রহণের পর কিন্তু আরও নানান দিকে লক্ষ্য অবশ্যই রাখতে হবে।
• অনেকেই মনে করেন ,টিকা গ্রহণের পর মাস্ক ছাড়া বেরোনো যাবে কিংবা কোনও দুরত্বিবিধি বজায় রাখতে হবে না। এটি কিন্তু একেবারেই সঠিক কথা নয়। মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা, বারবার হাত সানিটাইজ করা এগুলো ভুললে চলবে না
• টিকা দেওয়ার পর কয়েক দিনের জন্য অ্যালকোহল এবং তামাক সেবন বন্ধ রাখতে হবে। কারণ এটি ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বা খারাপ করতে পারে
• খালি পেটে ভ্যাকসিন নেওয়া একদম উচিত নয়
• টিকা দেওয়ার ঠিক আগে এবং কয়েক দিনের জন্য অনেক বেশি ক্যাফিনযুক্ত পানীয় গ্রহণ করা উচিত নয়
• ভ্যাকসিন নেওয়ার পরপরই খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম করবেন না
• ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা হলেও একটি বরফের প্যাক বা গরম সেঁক এড়ানোই ভালও
আরও পড়ুন ‘ক্ষতিকারক’ অ্যান্টিবায়োটিক কি করোনা আক্রান্ত রোগীদের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে?
ভ্যাকসিন গ্রহণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার। জ্বর, গা হাত পা ব্যথা, শরীর দূর্বল এবং মাথা যন্ত্রণার লক্ষণ থাকতেই পারে। তবে তার যদি স্থায়িত্ব তিনদিনের বেশি হয়, তবে ডায়াবেটিক রোগীদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন