নিয়ম মেনে চললে জরায়ুমুখের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাবেন মহিলারা

ডাক্তাররা বলছেন, সারভাইকাল অথবা জরায়ুমুখের ক্যানসার ১০০ শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য। বিস্তারিত জানাচ্ছে আমাদের নিয়মিত বিভাগ 'ডাক্তার-বদ্যি'

ডাক্তাররা বলছেন, সারভাইকাল অথবা জরায়ুমুখের ক্যানসার ১০০ শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য। বিস্তারিত জানাচ্ছে আমাদের নিয়মিত বিভাগ 'ডাক্তার-বদ্যি'

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

প্রতি দু'মিনিটে পৃথিবীতে একজন মহিলা সারভাইকাল (জরায়ু মুখের) ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন বা মারা যাচ্ছেন। প্রতিরোধ করা সম্ভব, কিন্তু এই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বা মৃত্যুর হার নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ভারতে এই মুহূর্তে প্রায় লাখ খানেক মহিলা সারভাইকাল ক্যান্সারে আক্রান্ত। পরিসংখ্যান বলছে, মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন প্রায় ৭০ হাজার। কিন্তু যথাসময়ে চিকিৎসা করা গেলে বা আগাম সাবধানতা বজায় রাখলে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের শিকার হতে হবে না মহিলাদের। ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, সারভাইক্যাল ক্যানসার ১০০ শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য।

Advertisment

কীভাবে হয় এই ক্যান্সার? এই ক্যান্সারের প্রথম কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) সংক্রমণ। এই সংক্রমণ মূলত যৌন মিলনের কারণে ঘটে থাকে। ভাইরাস জরায়ুমুখে বাসা বাঁধে। একাধিক মানুষের সঙ্গে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হলেই সারভাইকাল ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন নীলরতন সরকার হাসপাতালের গাইনাকলজিস্ট ডাঃ দেবমাল্য মাইতি।

আরও পড়ুন: ক্যান্সারের কবলে পড়বেন ১০ শতাংশ ভারতীয়, মৃত্যুর হারও আশঙ্কাজনক

ডাঃ মাইতি বলছেন, "মহিলাদের আগাম সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ একমাত্র আপনি সচেতন হলেই প্রতিকার করা সম্ভব। পরিসংখ্যান বলছে, মূলত গ্রামীন এলাকার মহিলাদের ক্ষেত্রেই এই রোগ বেশি হয়। কিন্তু এই ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্মূল করা সম্ভব। কারণ সাধারণত এইচপিভি সংক্রমণ থেকে ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দেওয়া পর্যন্ত সময় লাগে ১০ থেকে ২০ বছর। সুতরাং, ক্যান্সার হওয়ার আগেই আমরা ধরে ফেলতে পারছি যে ক্যান্সারের দিকে যাচ্ছে। এখানেই যদি আটকে দেওয়া যায় ভাইরাসকে, তাহলে ভয়ের কারণ থাকে না।"

Advertisment

publive-image

ডাঃ মাইতির মতে, আগাম সতর্কতা নিতে নিয়মিত 'প্যাপ স্মিয়ার' (pap smear) পরীক্ষা করানো দরকার। এই সহজ পরীক্ষাটি করা হয় জরায়ুমুখ থেকে সংগ্রহ করা কোষের, যার ফলে ক্যান্সার ধরা পড়ে। যাঁরা নিয়মিত যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হন, তাঁদের তিনবছরে অন্তত একবার করে 'প্যাপ স্মিয়ার' করতে হয়। অবশ্য যদি ফলাফল নেগেটিভ আসে, তবেই। যতদিন যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হবেন, ততদিনই এই পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া উচিত। 'প্যাপ স্মিয়ার'-এ সমস্যা ধরা পড়লে জরায়ুমুখের ক্যান্সার থেকে আগাম রক্ষা করা যাবে।

এই রোগের হাত থেকে বাঁচার একটি উপায়, একাধিক পুরুষের সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা। কন্ডোম ব্যবহার করলেই যে বিপদমুক্ত, এমনটা ভেবে নেওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ সামান্য ইউরিনারি ইনফেকশন অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে সেরে যেতে পারে, কিন্তু এক্ষেত্রে তা একেবারেই সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন: শর্করা জাতীয় পানীয়তেই কি ক্যান্সারের বীজ?

যদি কেউ জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তাহলে নিয়মিত 'প্যাপ স্মিয়ার' কোনো কাজ দেবে না, বলাই বাহুল্য। সেক্ষেত্রে কীভাবে মহিলারা বুঝতে পারবেন তাঁদের ক্যান্সার হয়েছে? ডাঃ মাইতি বলেন, এই সময় অত্যধিক ও অস্বাভাবিক সাদাস্রাব হবে। কয়েক বছর মাসিক রক্তস্রাব বন্ধ থাকার পর আবার রক্তস্রাব শুরু হবে (পোস্ট-মেনোপজ ব্লিডিং), এছাড়া সহবাসের পরও রক্তস্রাব হতে পারে। সেক্ষেত্রে রাতারাতি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সাধারণ বায়োপসি ও কল্পোস্কপি পরীক্ষাও করানো উচিত। ডাঃ মাইতি বলেন, যদি ক্যান্সার ধরা পড়েও, তবু ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জীবন শেষ, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ একাধিক চিকিৎসার পদ্ধতি রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব।

কোথায় হয় পরীক্ষা? এমন সরকারি হাসপাতাল, যেখানে স্ত্রীরোগ এবং প্যাথলজি বিভাগ আছে, সেখানে হয়। বেসরকারি ল্যাবরেটরিতেও হয়। খরচও বেশি নয়।