সাত দিনেই ফর্সা হওয়ার ক্রিম থেকে দাদ, হাজা, চুলকানির মলম, পাড়ার ওষুধের দোকানে গেলেই মিলবে সঞ্জিবনী বুটি, এমন অগাধ বিশ্বাস রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। আসলে বাজার চলতি এইসব মলমের বেশিরভাগেই রয়েছে স্টেরয়েড। যার অপব্যবহারে বর্তমানে কার্যত মহামারির আকার নিচ্ছে চর্মরোগ। আর এর জন্য পাড়ার দোকান থেকে ওষুধ কেনার এই বদ অভ্যাসকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা।
যতদিন পাড়ার ওষুধের দোকান থেকে মুড়ি মুড়কির মতো ওষুধ বিনা প্রেসক্রিপশনে বিলি হতে থাকবে, ততদিনই এমন খেসারত দিতে হবে আম জনতাকে, অন্তত এমনটাই বলছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা। ত্বক বিশেষজ্ঞ ডাঃ কৌশিক লাহিড়ির কথায়, ফর্সা করার দাবি জানিয়ে কোনও ওষুধ বিক্রি করা যায় না, অথচ রীতিমতো বড় বড় বিজ্ঞাপন দিয়ে রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে এই ধরণের ক্রিম। যার পুরোটাই অনৈতিক এবং বেআইনি। জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ে কী পরামর্শ দিচ্ছেন ডাঃ লাহিড়ি।
আরও পড়ুন: Heart Health Tips: হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, হার্ট ফেলিওর এক নয়
সংক্রমণের চারিত্রিক বদল
যাঁরা অতিরিক্ত জলের কাজ করেন তাঁদের চর্মরোগের সমস্যা হতে পারে। আট দশ বছর আগেও সংক্রমণ এমন ভয়াবহ আকার নিত না। বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে এই ধরনের সমস্যা বেড়েছে অনেকটাই। স্বাভাবিক ক্ষেত্রে যে সমস্ত জায়গায় ঘাম জমার সম্ভবনা বেশি, যেমন হাত বা পায়ের ভাঁজ, কুঁচকি, বা ঢাকা স্থানেই ছত্রাকের সংক্রমন হত, এবং চিকিৎসা করলে খুব সহজেই সেরে যেত।
তবে ইদানিং যে কোনও স্থানেই ছত্রাকের সংক্রমণ চোখে পড়ছে, যা অল্প সময়েই আগ্রাসি রূপ ধারণ করছে। আসলে বর্তমানে ছত্রাক তার চরিত্র বদলেছে। দেখা গেছে, সবচেয়ে দামি অ্যান্টি ফাঙ্গাল ক্রিমও কাজ করছে না। পরিবেশগত কারণের পাশাপাশি বদলাচ্ছে মানুষের মেটাবলিক সিস্টেমও।
সমস্যা কী কী
ব্রণ, দাদ, মেচেতার কালচে ছোপ, ত্বকে খুশকির মতো চামড়া উঠলে অনেকেই চিকিৎসকের তোয়াক্কা না করে বাজার চলতি স্টেরয়েড ক্রিম মুখে মেখে নেন। যে কোনও স্টেরয়েড না জেনে মুখে বা অন্যত্র মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করলে ত্বক পাতলা হয়ে যায়, ফলে লাল হয়ে রক্তনালী পর্যন্ত ফুটে ওঠে। ব্রনর সমস্যা হতে পারে। মহিলাদের মুখে অবাঞ্ছিত লোম গজাতে পারে। রোদে বেরলে চামড়া লাল হয়ে ফেটে রক্ত বেরনোর সম্ভবনা রয়েছে। ত্বকের জটিল অসুখে মানসিক সমস্যারও শিকার হতে পারেন রোগী। এমনকী স্টেরয়েড অ্যাডিকশন বা নেশার শিকারও হতে পারেন।
সতর্কতা অবলম্বন করুন আজই
সাধারণ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। গরমকালে দিনে অন্তত দুবার স্নান করুন।
সুতির জামাকাপড় ব্যবহার করুন।
কারও কথা শুনে স্টেরয়েড জাতীয় মলম লাগাবেন না। বিশেষত ট্রেনে বা রাস্তায় যে সমস্ত মলম বিক্রি হয় তাতে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড থাকে, যা ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
যদিও স্বেতি বা এগজিমায় স্টেরয়েড মেশানো ক্রিম কাজে আসে, তা মুখে মাখা উচিত নয়, সবিস্তারে না বুঝে অপব্যবহারে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, বাজার চলতি ৮০ শতাংশ মুখে মাখার ক্রিমেই স্টেরয়েড রয়েছে। এ দেশে প্রতি বছরে এই স্টেরয়েড ক্রিমের বিক্রি হয় প্রায় ১৪০০ কোটি টাকার, এবং ফর্সা হতে স্টেরয়েড ক্রিম মেখেছেন ২৯ শতাংশ ভুক্তভোগী। এই ভুক্তভোগীদের ৫০ শতাংশই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না নিয়ে বন্ধু, বিউটিশিয়ান বা পাড়ার ওষুধের দোকানের পরামর্শে স্টেরয়েড ক্রিম মাখেন। কাজেই আপনি বা আপনার পরিবার যদি এই তালিকাভুক্ত হতে না চান, তবে যেকোনও সমস্যায় পাড়ার দোকান বা লোকমুখে শুনে এই ধরনের ক্রিম ব্যবহার করবেন না।