রোগের আজ আর কোনও বয়স নেই। ছোটদের শরীরের হাই ব্লাড সুগার কিংবা প্রেশার খুবই সাধারণ ব্যাপার তেমনই অল্পবয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ছে ক্রমাগতই। বৃহস্পতিবার সকালেই এর শিকার জনপ্রিয় অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লা। মাত্র ৪০ বছর বয়সেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। বিগত কয়েক বছরে এই সংখ্যা ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। এর নির্দিষ্ট কিছু কারণের মধ্যে অনেকেই জীবনযাত্রাকে দায়ী করেন। অনিয়মিত এবং শারীরিক অত্যাচারের মাত্রা যুব সমাজকে নানান ভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে এমনটাই বিশ্বাস অনেকের।
এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা ঠিক কী বলছেন? ডা. শুভেন্দু মোহান্তি ( হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, শারদা হাসপাতাল, নয়ডা) বলেন, বিগত ১০-১৫ বছরের তুলনায় অল্পবয়সীদের মধ্যে ক্রমশই হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ছে। ১৮ থেকে ২০ বছরের অনেক ছেলে মেয়েই হৃদরোগের শিকার বলেই জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন অল্পবয়সীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাস বাড়ছে। সারাদিনে প্রচুর মাত্রায় ধূমপান এর এক বর্ধিত কারণ। আর তার সঙ্গে রয়েছে উচ্চ মানসিক চাপ। বেশিরভাগ তরুণদের মধ্যে পেশাগত জীবনের নানান চাপ লেগেই থেকে তার সঙ্গে ব্যক্তিগত সমস্যাও কিছু কম নেই। মানসিক চিন্তা শরীরের পক্ষে ভীষণ খারাপ। শারীরিক সচলতা কমছে প্রতিনিয়ত। এমনিই মহামারীর কারণে বাড়িতেই রয়েছেন সকলেই। ফলতই শরীর অসাড় হয়ে যাওয়ার জোগাড়। তবে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে যে বিষয়টি সেটি অত্যধিক মাত্রায় তেলমশলা যুক্ত খাবার কিংবা বাইরের খাবার। শরীর সুস্থ রাখতে গেলে সবসময় রাত্রিবেলা হালকা পাতলা কিছুই খাওয়া উচিত, বেশি জাঙ্ক ফুড শরীরে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। সেই থেকেই সূত্রপাত হয় হার্ট অ্যাটাকের।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন:
হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা থেকে বাঁচতে হলে আগে এর ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তার সঙ্গে অবশ্যই দরকার জীবনে লাগাম দেওয়ার। মানুষের বয়স ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী তাই, শরীরের পক্ষে প্রয়োজনীয় সবকিছুই ভেবে চিন্তে করা দরকার। যদি ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টরল এসব সমস্যায় ভোগেন তবে অবশ্যই সময় থাকতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করুন।
আর যদি শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকেন, তারপরেও বেশ কিছু পথ অনুসরণ করতে হবে। চিকিৎসকদের সুপারিশ অনুযায়ী নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে প্রায় ৯৫ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা নেই।
• ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সপ্তাহে পাঁচদিন শরীরচর্চা অবশ্যই দরকার। কার্ডিও ব্যায়াম, সাইক্লিং, সাঁতার, নিয়মিত জগিং শরীরের পক্ষে ভাল। তবে ওয়েট লিফটিং-এর বিষয়ে অত্যধিক ওজন তুলবেন না, সেটি আবার হার্টের জন্য খারাপ।
• কাজ থেকে মাঝে মধ্যে বিরতি নিন। পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। একনাগাড়ে মানসিক চাপ হার্টের পক্ষে খুবই খারাপ।
• ধূমপান এবং মদ্যপান একদম বন্ধ করে দিতে হবে। স্বল্প পরিমাণে হলেও তার প্রভাব মারাত্মক। এককথায় অনিয়মিত জীবনযাত্রার ইতি ঘটান।
• খাবারে শাক সবজি এবং গোটা ফল অন্তর্ভুক্ত করুন। নুন খাওয়া কমিয়ে দিন।
শরীরের খারাপ ভালও বয়স আর পরিস্থিতি বুঝে কখনওই আসে না। তাই যতক্ষণ সম্ভব নিজেকে তার রাশ ধরে রাখতে হয়। তরুণ প্রজন্মের এই উশৃঙ্খল জীবনযাত্রা অনেক প্রাণ অকালেই কেড়ে নিয়েছে। সিদ্ধার্থ নিজেও তার ব্যক্তিক্রম নন। ফিল্মি দুনিয়ার অনেকেরই অনিয়মিত এবং অনিয়ন্ত্রিত দিনযাপন বারবার চোখে পড়ে সকলেরই। তবে শুধু নিজের জন্য নয়, কাছের মানুষ এবং পরিবারের সকলের জন্য বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা উচিত প্রতিটি মানুষের। তাঁর অকাল প্রয়াণে শোকাহত গোটা বলিউড থেকে অনুরাগীরা সকলেই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন