মনে 'প্রন'-এ বাঙালি তো? নাকি ইলিশে রেলিশ! ঘুরে আসুন রাজ্য সরকারের ইলিশ চিংড়ি মেলা

নলবন চত্ত্বর জুড়ে স্টল দিয়েছেন যারা, তাঁদের বেশির ভাগই মৎস্য ব্যবসায়ী নন। মাছ ধরাই যাদের পেশা, সরাসরি তাদের কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন এখানে এলে।

নলবন চত্ত্বর জুড়ে স্টল দিয়েছেন যারা, তাঁদের বেশির ভাগই মৎস্য ব্যবসায়ী নন। মাছ ধরাই যাদের পেশা, সরাসরি তাদের কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন এখানে এলে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

মেলা চলবে তিন দিন

মাঠে ইস্ট বেঙ্গল আর মোহন বাগান। মুখোমুখি নয়, বরং একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলবেন। বিপক্ষে নেই কেউ। ধুর! এরকম আবার হয় নাকি? বিশ্বাস হচ্ছে না তো? এরকমই হয়েছে যে! তবে কিনা মাঠের বদলে পাতে। একসঙ্গে উঠেছে ইলিশ-চিংড়ি। কোনও রেষারেষি ছাড়াই ভোজনরসিক বাঙালির জিভ জুড়ে এখন এরাই। এমন বিরল সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হতে হলে কিন্তু আপনাকেও আসতে হবে নলবনের ইলিশ-চিংড়ি মেলায়।

Advertisment

রাজ্য সরকারের মৎস্য উন্নয়ন নিগমের উদ্যোগে সল্টলেকের নলবনে তিন দিন ধরে চলবে ইলিশ-চিংড়ি উৎসব। আজ বিকেলে মেলার উদ্বোধন করলেন মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রয়াণে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অবশ্য বাতিল করা হয়েছে। তাই মেলার আবহাওয়ায় উচ্ছ্বাসের কিঞ্চিৎ ঘাটতি সত্ত্বেও আয়োজনের খামতি ছিল না কোনও। মেলা চলবে কাল, ১৯ আগস্ট পর্যন্ত।

publive-image আছে গলদা, বাগদা, মিঠা, চাপড়া, ছেমলা রকমারি চিংড়ি।

সবচেয়ে অভিনব ব্যাপারটি হল, নলবন চত্ত্বর জুড়ে স্টল দিয়েছেন যারা, তাঁদের বেশির ভাগই মৎস্য ব্যবসায়ী নন। মাছ ধরাই যাদের পেশা, সরাসরি তাদের কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন এখানে এলে। ব্যাপারটা বেশ থ্রিলিং, বলুন? একটু হেসে আপনি কথা বলতে চাইলেই জানতে পারবেন এঁদের রোজনামচা। রাতের পর রাত সমুদ্রে-নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে তাঁদের যা সব অভিজ্ঞতা হয়, কলকাতা চষে বেড়ালেও সে গল্প কেউ আপনাকে শোনাতে পারবে না। ভারি রসিক মানুষ এঁরা। মাছ কেনার জন্য সামান্য জোরাজুরি করেছেন কী করেননি, বলে ফেলেছি, "আমি সাংবাদিক, পুরোটা ঘুরে দেখি?’’ ওপাশ থেকে সহাস্য মন্তব্য, “আরে, সাংবাদিকরাও তো মাছ-টাছ খায়, না কি!"

Advertisment

publive-image মেলায় যেমন গঙ্গার ইলিশ পাবেন, আবার রূপনারায়ণেরও পাবেন

ইলিশ চিংড়ি মেলায় যেমন গঙ্গার ইলিশ পাবেন, আবার রূপনারায়ণেরও পাবেন। শুধু তাই-ই নয়, গুজরাত, মুম্বই, ওড়িশার পাশাপাশি সুদূর ওমান, মায়ানমার থেকেও এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এখন নলবন আলো করেছে জলের রুপোলী ফসল। ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে সেসব। সঙ্গে আছে গলদা, বাগদা, মিঠা, চাপড়া, ছেমলা রকমারি চিংড়ি। ২,০০০ টাকা কেজির বাগদা, ১,৬০০ টাকা কেজির বাগদাও পাবেন। আবার হেনরি আইল্যান্ডে দিন কয়েক আগে ধরা পড়া ১৯ কেজির ভেটকিও রয়েছে স্টলে।

শুধু কাঁচা মাছে যদি মন না মজে, রয়েছে অন্য ব্যবস্থাও। শহরের বেশ কিছু নামীদামী রেস্তোরাঁ এখানে পসরা সাজিয়ে বসেছে ইলিশ-চিংড়ির রকমারি ব্যঞ্জন নিয়ে। ইলিশ পাতুরি, ইলিশের কোপ্তা, ইলিশ বিরিয়ানি, কচু ইলিশ, দই ইলিশ, ক্রিম ইলিশ, ইলিশ পোলাও, ইলিশ ফুলুরি, মেথি ইলিশ, বেগুন দিয়ে নোনা ইলিশ, লাউ চিংড়ি, চিংড়ির মালাইকারি, চিংড়ির কাটলেট, চিংড়ি খিচুরি, কী নেই সেখানে! দেশি নামে মন ভরল না? স্মোকড প্রন উইথ হোয়াইট সস, স্প্যানিশ গার্লিক প্রন, প্রন ক্র্যাকার, প্রন সাতে, হিলসা ইন থাই কারি, হিলসা ইন চিলি বেসিল সস, হিউনান হিলসা। এবার চলবে?

publive-image “ইলিশ-চিংড়ি তো আর শুধু বাঙালির জিভে আটকে নেই, ওটা তো একটা সেন্টিমেন্ট। বাঙালিকে আড়াআড়ি ভাগ করে দেয় রীতিমতো।"

“ইলিশ-চিংড়ি তো আর শুধু বাঙালির জিভে আটকে নেই, ওটা তো একটা সেন্টিমেন্ট। বাঙালিকে আড়াআড়ি ভাগ করে দেয় রীতিমতো। কিন্তু শুধু আবেগের দিকটা মাথায় না রেখে বাজারটাকেও তো ধরতে হবে। ভারতীয় উপমহাদেশে মাছের প্রজাতি এবং রান্নায় এত বৈচিত্র, এর সাথে বাঙালির পরিচয় ঘটাতেই সরকারের এই উদ্যোগ,” জানালেন রাজ্যের মৎস্য উন্নয়ন নিগমের পরিচালন অধিকর্তা সৌম্যজিৎ দাস।

মৎস্য মন্ত্রীর কথাতেও উঠে এল দেশের নানা প্রজাতির মাছ এবং রন্ধন প্রণালির বৈচিত্রের কথা। জানালেন, "রাজ্যে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টায় আছে সরকার। ইলিশের ডিম সংরক্ষণের করে উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে অসরকারি সংস্থা ‘ওশিমা’-র সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।" মেলা চলাকালীন অভিযোগ এল, সমুদ্রে যন্ত্রচালিত নৌকো চালানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। অভিযোগ শুনলেন মন্ত্রী, আশ্বাস দিলেন, খতিয়ে দেখবেন কারা এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

publive-image হেনরি আইল্যান্ডে দিন কয়েক আগে ধরা পড়া ১৯ কেজির ভেটকিও রয়েছে স্টলে

দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শ্যামসুন্দর দাস বললেন, "রুই কাতলা, পার্শে ছাড়া ক’টা মাছের খবর বাংলার মানুষ রাখে? প্রায় ২০০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ আছে। এই সব মাছের চাহিদা বিদেশে অনেক বেশি। এ বছর সাড়ে তিন কোটি টাকার মাছ রফতানি করেছি আমরা। অথচ এখানকার মানুষ এর কদর বুঝল কই?"

স্টলের জনৈক মৎস্যজীবীরও একই আক্ষেপ, "বাঙালি শুধু ইলিশ চিংড়ি বোঝে। সমুদ্রের এত এত মাছের নাম,স্বাদ, গন্ধ চিনলই না।" সাদা পাতা থেকে কালো কালো অক্ষরগুলো জীবন্ত হয়ে উঠল মুহূর্তে। কানের কাছে একটা বিষণ্ণ স্বর যেন বলছে, "হালার মাছ ধইর‍্যা জুত নাই।"