হিন্দুতীর্থের চার ধাম হিসেবে উত্তরাখণ্ডে ধরা হয়- গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, কেদারনাথ আর বদ্রীনাথকে। আর গোটা ভারতে ধরা হয়- জগন্নাথধাম, রামেশ্বরম, দ্বারকা আর বদ্রীনাথ ধামকে। তীর্থের জন্য এই চার ধাম জীবনে অন্তত একবার যাওয়ার চেষ্টা করেন সব হিন্দুই। এই চার ধামের মধ্যে রামেশ্বরম তামিলনাড়ুর রামনাথপুরম জেলায় অবস্থিত।
রামেশ্বরম নামটি এসেছে রামের ঈশ্বর কথাটি থেকে। চেন্নাই থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে একটি শঙ্খ আকৃতির দ্বীপ রামেশ্বরম। যার চারদিকে ভারত মহাসাগর আর বঙ্গোপসাগর। এই দ্বীপের পূর্ব প্রান্তে রয়েছে শিবমন্দির। যা দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম বলেই ভক্তদের বিশ্বাস।
রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির ৮৬৫ ফুট লম্বা এবং ৬৫৭ ফুট চওড়া। এখানকার মন্দিরের চত্বরে আরও কয়েকটি ছোট মন্দির রয়েছে। তার মধ্যে দক্ষিণ দিকে রয়েছে দেবী পার্বতী বা রামেশ্বরীর মন্দির। প্রতি শুক্রবার এই পার্বতী মন্দিরের মূর্তিকে নবরত্নে সাজিয়ে সোনার পালঙ্কে বসিয়ে মন্দিরের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের হয়। সঙ্গে চলে বেদপাঠ। এখানে ১২ ফুট লম্বা চুন-বালিতে তৈরি একটি নন্দীমূর্তি রয়েছে। সেই নন্দীমূর্তির পাশ দিয়ে গিয়েই গর্ভমন্দিরে প্রবেশ করতে হয়। এই গর্ভমন্দিরেই রয়েছে রামেশ্বরম শিবের লিঙ্গমূর্তি।
এই মন্দিরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, মন্দির চত্বরের মধ্যে থাকা ২২টি কূপ। যাকে কুণ্ড বলা হয়। যেগুলোর জলের তাপমাত্রা পরস্পরের থেকে আলাদা। ভক্তদের বিশ্বাস, এই কূপের জলে স্নান করলে রোগ-ব্যাধি দূর হয়। ভক্তদের বিশ্বাস যে এই কূপের জলে ওষুধের গুণ রয়েছে। এই সব কূপ থেকে জল তুলে মন্দিরে রোগীদের স্নান করালে, রোগ নিরাময় হয়।
আরও পড়ুন- মন্দির দেয় বৃষ্টির নির্ভুল পূর্বাভাস, বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা মেলে না
এই সব কূপ বা কুণ্ডগুলোর একটি হল রুদ্র কুণ্ড। কথিত আছে, মাতুল কংসকে হত্যার পর সেই পাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শ্রীকৃষ্ণ এখানে এসেছিলেন। রুদ্র কুণ্ডতে স্নান করেছিলেন। আর, কংস হত্যার পাপ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এই মন্দির চত্বরে রয়েছে বিষ্ণুমন্দিরও। সেখানে শ্বেতপাথরের বিষ্ণু মূর্তি রয়েছে।
মন্দিরের কাছেই আছে নাটমন্দির। সেই নাটমন্দিরের সামনে সোনার তালগাছ আছে। তার পরেই আছে সোনার বেষ্টনী দেওয়া বেদী। সেখানে বেদ পাঠ করা হয়। নাটমন্দিরের পর বারান্দা পেরিয়ে মন্দির। যেখানে সোনার বেদীর ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে জ্যোতির্লিঙ্গ। যাকে ঢেকে রেখেছে সোনার তৈরি পঞ্চমুখ। এর মাথার ওপরে পঞ্চফণা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কালনাগ। রামেশ্বরের দক্ষিণ দিকে রয়েছে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র, সীতা দেবীর মূর্তি।