দেবী গুপ্তমণির মন্দির অবস্থিত, ঝাড়গ্রাম রাজবাঁধের গুপ্তমণিতে। এই মন্দিরটি ঝাড়গ্রাম থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূর। আর, খড়গপুর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। ঝাড়গ্রাম থেকে বাসে চেপে গুপ্তমণি যাওয়া যায়। বাসের কন্ডাক্টারকে বলতে হবে গুপ্তমণিতে নামিয়ে দিতে। আবার, ট্রেনে চেপেও যাওয়া যায় গুপ্তমণিতে। সেজন্য নামতে হবে সরডিহা স্টেশনে। সেখান থেকে টোটোয় চেপে যাওয়া যেতে পারে গুপ্তমণি। অথবা ক্ষেমাশুলি স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে বাসে চেপে এনএইচ ৬ বা ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আসতে হবে এই মন্দিরে।
দেবী গুপ্তমণির মন্দির গড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে অনেকগুলো কারণ। কথিত আছে, দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে গড়ে উঠেছিল এই মন্দির। একসময় ঝাড়গ্রাম-সহ বেশ কিছু এলাকা ছিল রূপনারায়ণ মল্লদেবের বংশের অধীনে। রূপনারায়ণ মল্লদেব স্বপ্নে দেখেছিলেন যে তাঁর প্রিয় হাতি হারিয়ে গিয়েছে। সেই হাতি জঙ্গলে লতাপাতায় বাঁধা অবস্থায় আটকে আছে। রাজা অবশেষে লোকজন নিয়ে সুখনিবাসের জঙ্গল থেকে হাতিটি উদ্ধার করেন।
এরপর বেশ কিছুকাল পর লোধা সম্প্রদায়ের তৎকালীন নেতা নন্দ ভক্ত স্বপ্নাদেশ পান, সুখনিবাসের জঙ্গলে একটি পাথরের মূর্তি রয়েছে। নন্দ ভক্ত যাতে ওই মূর্তির পুজো করেন, এমনটাই স্বপ্নাদেশে জানানো হয়। স্বপ্নাদেশ পেয়ে পরদিন নন্দ ভক্ত সুখনিবাসের জঙ্গলে যান। আর, দেবীর মূর্তিটি খুঁজে পান। সেখানেই এরপর মূর্তিটি পুজোর ব্যবস্থা করেন নন্দ ভক্ত। সেই খবর পৌঁছয় রাজার কানেও। তিনি এরপর নন্দ ভক্তের বাড়ি ও সুখনিবাসের জঙ্গলে যান। রাজা এরপর সুখনিবাসের জঙ্গল নন্দ ভক্তদের দিয়ে দেন। সেদিন থেকেই সাড়ম্বরে দেবী গুপ্তমণির পুজো শুরু হয়।
আরও পড়ুন- জাগ্রত নকশা মন্দির, বাংলার নতুন তারাপীঠ
দেবী গাছের গুঁড়িতে লুকিয়ে ছিলেন বলে, তাঁর নাম হয়েছিল গুপ্তমণি। আবার, জায়গাটি রাজার গুপ্তস্থান ছিল। সেই কারণেও অনেকে মনে করেন যে রাজা জায়গাটির নাম দিয়েছিল গুপ্তমণি। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী গুপ্তমণি অন্ধকারে থাকতে ভালোবাসেন। মন্দিরের ভিতরে আলো লাগালেও সেই আলোর ব্যবস্থা টেকে না-বলেই দাবি ভক্তদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই মন্দিরের পাথরের মূর্তির নীচে কংক্রিটের স্লাব বসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, দেবীর অনিচ্ছায় নানা কারণে তা ভেস্তে গিয়েছে।
ভক্তদের বিশ্বাস, দেব গুপ্তমণি হলেন রক্ষার দেবী। তিনি তুষ্ট থাকলে যে কোনও ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যাঁরা সেকথা জানেন, তাঁরা মন্দিরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেবীকে প্রণামী দিয়ে মনস্কামনা জানিয়ে যান। আবার, ভক্তদের বিশ্বাস, কোনও হারানো জিনিস ফিরে পেতে গুপ্তমণি দেবীর কাছে প্রার্থনা করলে, তা সহজেই ফিরে পাওয়া যায়। তবে, সেই হারানো জিনিস ফিরে পেতে মন্দির প্রাঙ্গণের গাছে বাঁধতে হয় মাটির হাতি ও ঘোড়া। দেবী গুপ্তমণির অবয়ব অবিকল দেবী দুর্গার মত। মকর সংক্রান্তি এবং দুর্গাপুজোর সময় এখানে বেশ বড় আকারে পুজো হয়। দুর্গাপুজোর নবমী-দশমীতে এখানে বলি প্রথা পালিত হয়।