আহা! 'এমনও দিনে তারে বলা যায়... এমনও ঘনঘোর বরিষায়'- বর্ষাকালের নানা চার্ম আছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু তার পাশাপাশি এও অস্বীকার করলে চলে না, বর্ষাকালে কিন্তু রোগ ভোগের সম্ভাবনাও খুব বেশি হাকে। ডেঙ্গু, জ্বর, ম্যালেরিয়া, সর্দি কাশি, মাথা ব্যথা একটা না একটা লেগেই থাকে। তাই বর্ষাকাল মানে কেউ বলবেন গরম চা আর পকোড়া, কেউ বলবেন শুধুই প্যাচপ্যাচে বৃষ্টি। কারো হঠাৎ পাওয়া রেনিডে-র ছুটির মজা, কারো বৃষ্টিতে ভিজে কাজে যাওয়া। সত্যিই বর্ষার যেমন রোমান্টিক আবেশ তৈরি করে, তেমনই প্যাচপ্যাচে বৃষ্টিতে ফ্যাচফ্যাচে নাক, জ্বর জ্বর ভাব আর পেট খারাপের সমস্যা সত্যিই বিরক্তিকর, একইসঙ্গে কষ্টকরও বটে। বর্ষাকাল হচ্ছে এমন একটা সময় যখন, একাধিক রোগের আধিক্য বাড়ে। বর্ষার স্যাঁতস্যাতে আবহাওয়াতেই ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসদের বাড়বাড়ন্ত। পাশাপাশি পোকামাকড়ের প্রজনন সময়ও এটি। আর সে কারণেই সংক্রমণ এই সময় দ্রুতগতিতে ছড়ায়। তবে যদি কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা যায়, তাহলে অতি সহজেই এই ধরণের রোগ প্রতিহত করা সম্ভব হয়।
বৃষ্টিতে ভিজলেই হাল্কা গরম জলে চান করুন
বৃষ্টিতে ভিজতে আপনি যতই ভালবাসুন না কেন, নিজের শরীরের কথা মাথায় রেখে এড়িয়ে চলুন বৃষ্টিতে ভেজা। আর যদি কোনওভাবে বৃষ্টিতে ভিজেও যান, তাহলে বাড়ি ফিরে সঙ্গে সঙ্গে হাল্কা গরম জলে চান করে নিন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যদি হাল্কা সর্দি বা জ্বরজ্বর ভাব হয়, তাহলে নিজে নিজের কোনও ওষুধ খেয়ে নেবেন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। তাই বর্ষাকালে যে কোনও শারীরিক অসুবিধায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হলুদ দুধ খান
নাক দিয়ে জল পড়ছে, গলা ব্যথা? এক গ্লাস দুধে ২ চামচ হলুদগুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণকে ভাল ভাবে ফোটান। ২-৩ মিনিট ফোটানোর পর ছেঁকে নিন। এই হলুদ দুধের মিশ্রণ দিনে দুবার খান।
নুন জলে গার্গেল করুন
গলার ব্যথার সমস্যা খুবই বেদনাদায়ক। না ঠিক করে কিছু খাওয়া যায়, না কথা বলা যায়। গার্গেল করুন ঘন ঘন। সঙ্গে গলার ব্যথা কমবে খুব তাড়াতাড়ি। সবচেয়ে ভাল হয়, বর্ষা কাল এলেই অন্তত দিনে একবার করে গার্গেল করুন। এতে গলায় ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে পারবে না। ফোটানো জল খান বর্ষাকালেই জলবাহিত একাধিক রোগ যেমন জন্ডিস, আন্ত্রিক, কলেরার আধিক্য হয়। তাই এই সময়টা বিশেষ করে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করা জল খান সবসময়। শিশুরা এবং বয়স্করা এই ধরণের রোগের শিকার সবচেয়ে আগে হন, তাই তাদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
মশারি ব্যবহার করুন
বর্ষাকাল মানেই মশার ডিম পাড়ার সময়। সেই কারণেই এই সময় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ছড়িয়ে পরে। সেই কারণে মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে মশারির ব্যবহার করুন। মশা তাড়ানোর ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন নিজেকে
ব্যকটেরিয়া এবং ভাইরাস আপনার চারিদিকে ঘুরছে। তাই নিজেকে সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখুন। নাহলেই আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। বাড়ি ঢুকে সবসময় হাত-পা ধুয়ে নিন। খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে খান। ঘুমোতে যাওয়ার আগে পা ধুয়ে শুতে যান। আপনার আশপাশ পরিষ্কার রাখুন জমা জলেই ম্যালেরিয়ার মশা জন্মায়। তাই কোনও জায়গায় জল জমিয়ে রাখবেন না। বৃষ্টির ফলে জল জমলেও তা তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। রাস্তার খাবার এই সময়ে একেবারে এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত জামা ব্যাগে বা অফিসে রাখুন এই সময় ভিজে গেলে এবং ভিজে জামা পরে থাকলে তা শরীরের পক্ষে সবথেকে খারাপ। চেষ্টা করুন ব্যাগে বা অফিসে অতিরিক্ত একটি জামা নিয়ে যেতে। ভিজে গেলেও যাতে ভেজা জামা ছেড়ে ফেলতে পারেন। ছাতা বা রেনকোট বৃষ্টিতে কখনওই এড়িয়ে যাবেন না।