দেশ তথা বিশ্ব ওমিক্রন দাপটে নাজেহাল। বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়েছে সংক্রমণ। ভারতের পরিস্থিতি রীতিমত উদ্বেগ বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া বিবৃতি অনুসারে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। এদিকে জানুয়ারি শেষে অথবা ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছাতে পারে বলেই দাবি করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে ওমিক্রন যেভাবে শিশুদের ওপর দাঁত মুখ খিঁচিয়ে আক্রমণ করছে তা নিয়ে রাতের ঘুম উড়েছে বাবা, মায়ের। অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। যদিও অতীতে, শিশুরা SARs-COV-2 ভাইরাসের প্রতি আরও শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখিয়েছে, তবে ওমিক্রন ভ্যরিয়েন্ট অনেকক্ষেত্রে শিশুদের জন্য বিপ্পজনক হয়ে উঠতে পারে। ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ির ওদলাবাড়িতে করোনায় ৬দিনের শিশুর মৃত্যু ঘটনা সামনে আসতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে অভিভাবক থেকে চিকিৎসক মহলের। যদিও ওমিক্রন ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে এটাও লক্ষ করা যাচ্ছে রোগীরা সাতদিনের মধ্যেই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছেন। তবে অনেক শিশুর ক্ষেত্রে ওমিক্রনও ডেকে আনতে পারে চরম বিপদ তাই উপেক্ষা নয়। সাবধানে রাখুন আপনার সন্তানকে
বাচ্চাদের জন্য ওমিক্রন কতটা উদ্বেগজনক?
বারবার, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি, কারণ অল্পবয়সী জনসংখ্যার বেশিরভাগই এখনও তাদের ভ্যাকসিন পায়নি। সেই সঙ্গে ওমিক্রন অনেক বেশি সংক্রামক। বাচ্চাদের উপর ওমিক্রনের এর মারাত্মক প্রভাব নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য না থাকলেও, দিল্লিতে সাতটি বাচ্চার মৃত্যু বিশ্বজুড়ে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন করেছে। দিল্লিতে যে সাতটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ৫ জনের বয়স ১৫ বছরের কম। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী বাচ্চাদের টিকা দানের কাজ বেশ দ্রুত গতিতে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনগুলি জনসাধারণকে ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে এবং বিশেষত বাচ্চাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তবে যে হারে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ছে তার থেকে শিশুদের নিরাপদে রাখা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।
শিশুদের মধ্যে যে লক্ষণগুলি বেশি মাত্রায় দেখা যাচ্ছে-
ফর্টিস হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট-শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জেসাল শেঠ জানাচ্ছেন, "শিশুদের মধ্যে ওমিক্রন ভাইরাসের বিস্তার আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি। সিডিসি তথ্য অনুসারে গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬৭২ জন শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ওমিক্রন মুলত শ্বাসযন্ত্রের ওপরের ট্র্যাক্টের উপর প্রভাব ফেলে এবং শিশুদের ক্ষেত্রে তা অনেক সময় বিপ্পজনক হয়ে ওঠে। ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে শিশুদের মধ্যে মূলত যে লক্ষণ গুলি বেশি দেখা যায়, সেগুলি হল ঠান্ডা লাগা, নাক দিয়ে জল পড়া, সর্দি কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা, চুলকানি, নাক বন্ধ হয়ে থাকা ইত্যাদি।
কীভাবে শুরু করবেন চিকিৎসা-
ডাক্তার শেঠ জানাচ্ছেন, ওমিক্রনে যদি আপনার সন্তান আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে আপনার বাচ্চাকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে। এই সময় অনেক বেশি জল খাওয়া দরকার। সেটা আগে খেয়াল রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ভাপ নেওয়া। গার্গেল করা ইত্যাদি চালু রাখতে হবে। বুকে পিঠে গরম সেক দিলে এক্ষেত্রে সাময়িক স্বস্তি মিলতে পারে। তিনি বলেছেন, যদি নাক দিকে কাঁচা জল, কাশি ইতাদি উপসর্গ ২-৩ দিনের বেশি থাকে সেক্ষেত্রে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন। সাধারণ ফ্লু, এবং কোভিডের অন্যান্য রূপগুলির মধ্যে অনেক ভুল ধারণা এবং বিভ্রান্তি রয়েছে, সেক্ষেত্রে একজন ডাক্তারের কাছে যাওয়া এবং তাড়াতাড়ি আপনার সন্তানের চিকিৎসা শুরু করা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন।
বাচ্চারা আক্রান্ত হলে, আপনি কী ভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?
এপ্রসঙ্গে ডাক্তার শেঠ জানিয়েছেন, আপনার সন্তান যদি ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে ঘরের মধ্যেও তাদের মাস্ক পরিয়ে রাখা উচিত। সেই সঙ্গে সময়ে সময়ে হ্যান্ড ওয়াশ, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, হাইজিন প্রোটোকল অনুসরণ করা উচিত৷ আপনি যখন আপনার সন্তানকে পরিচর্যা করছেন তখন ডবল মাস্ক পড়ুন। হাত পরিষ্কার রাখুন। সেই সঙ্গে যাবতীয় হাইজিন প্রোটোকল মেনে চলুন। এই সময় বাচ্চাদের ভিড়ে নিয়ে একদম বেরোবেন না। আপনার বাচ্চার কোনো উপসর্গ থাকলে শুধুমাত্র জরুরী পরিস্থিতিতে বাইরে যাওয়াই ভালো।"