ফল খাওয়া কি ডায়াবেটিস রোগীদের পক্ষে কি ঠিক? কতটা পরিমাণে ফল খাওয়া ডায়াবেটিকদের জন্য উপযুক্ত হতে পারে? এহেন প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন।
ফল আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ উপকারী। একদিকে ফল যেমন খিদে মেটায়, অন্যদিকে এতে উপস্থিত নিউট্রিয়েন্টস এবং ভিটামিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। ফল শরীরের শর্করার পরিমাণ ধরে রাখে, জলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং কিছু কিছু ফল শরীরের টক্সিন দূর করতেও সাহায্য করে। অনেকেই মনে করেন, ফলের নিজস্ব শর্করার পরিমাণ খুবই বেশি এবং সেই কারণেই ডায়াবেটিস রোগীদের পক্ষে অতিরিক্ত মাত্রায় ফল গ্রহণ করা শরীরের পক্ষে উপযুক্ত নয়। কিন্তু সারাদিনে কতটা ফল ডায়াবেটিকরা নিজেদের ডায়েটের তালিকায় রাখতে পারে? জেনে নিন।
ডায়াবেটিস এডুকেটর, ডায়েটিশিয়ান লক্ষিতা জৈন জানিয়েছেন, প্রতিদিন দুটির বেশি ফল খাওয়া স্বল্প মাত্রায় হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আরো জানান যে সমস্ত ব্যক্তিরা বেশি মাত্রায় ফল খান ,তারা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে আনতে ইনসুলিন কম মাত্রায় উৎপাদন হয়। এই বিষয়টি মানবদেহের সঙ্গে বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কারণ অতিরিক্ত মাত্রায় ইনসুলিন প্রয়োগ রক্তনালী গুলির ক্ষতি করতে পারে। শুধু তাই নয় তার পাশাপাশি হৃদরোগ ,উচ্চরক্তচাপ এই বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কিত।
ডায়াবেটিস রোগীদের পক্ষে সব রকমের ফল গ্রহণ করা শরীরের পক্ষে ঠিক নয়। অতি মাত্রায় শর্করা যুক্ত ফল যেমন- আম, কাঁঠাল, লিচু, স্ট্রবেরি এই সমস্ত ফলগুলি ব্লাড সুগার লেভেল অনায়াসে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এগুলি এড়ানো ভালো। সাধারণত ডায়াবেটিকদের পক্ষে নিম্ন থেকে মাঝারি গ্লাইসেমিক সূচক ফল গ্রহণ করা উপযোগী। গ্লাইসেমিক সূচক অর্থাৎ ফল বা খাদ্যদ্রব্য রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কি পরিমানে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে দিতে থাকে। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের পক্ষে জিআই সূচক ফল বেশি কার্যকরী। এতে রক্তের শর্করাও বজায় থাকে এবং এতে থাকা ফাইবার পাচনতন্ত্রের সহায়ক। তবে খেয়াল রাখতে হবে পরিমাণের দিকে।
<আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কী সমস্যা হতে পারে? জানুন>
ডায়াবেটিকরা কী কী ফল খেতে পারেন?
আপেল, অ্যাভোকাডো, কলা, বেরি, স্ট্রবেরি, পিচ, শসা, নাশপাতি, পেয়ারা, মৌসম্বি, লেবু, জাম, পেঁপে, কিউই ফল এবং আনারস খেতে পারেন। তবে প্রশ্ন আসতে পারে, ফল নাকি ফলের রস কোনটি শরীরের পক্ষে বেশি উপযুক্ত? সেই প্রসঙ্গে বলতে গেলে গোটা ফল শরীরের পক্ষে সবথেকে বেশি উপকারী। গোটা ফলে থাকে ফাইবার, ভিটামিন এবং নানান খনিজ পদার্থ- এগুলি শরীরের পক্ষে প্রয়োজনীয়। যদিও বা ফলের রস বানানো হলে বাড়িতেই বানানো শ্রেয়। কারন বাজারজাত ফলের রস সোডার সমান। এতে প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা ভিটামিন কিছুই থাকে না।
রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা অনুযায়ী, ফলের নির্বাচন করা দরকার। যদি সুগারের পরিমাণ ১৫০ মিলিগ্রাম হয় তবে একটি সম্পূর্ণ আম বা সম্পূর্ণ কলা খাওয়া সঠিক হিসেবে গণ্য হলেও যদি, সুগারের পরিমাণ ৩০০ মিলিগ্রাম হয় সেই ক্ষেত্রে ফল নির্বাচন ভেবেচিন্তে করা উচিত। এমন ফল খাওয়া একেবারেই উচিত নয়, যেগুলি রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। প্রয়োজনে ডাক্তার কিংবা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন