ভারতের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে এখনও মেয়েদেরে স্বাধীনতা হোক কিংবা লিঙ্গভেদে ভিন্নতা সবসময়ই এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তাদের পিছিয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। এমন এক সময় ছিল যে, পর্দা প্রথার আড়ালে শিক্ষার আলোটুকু দেখার স্বাধীনতা তাঁদের ছিল না। আর একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও অনেক কাজই নাকি মেয়েদের করতে নেই, অনেক জায়গায় তাঁদের প্রবেশ নিষেধ এমনকি পুরুষবেষ্টিত পরিসরে তাঁদের নাকি মানায় না! এখনও এই ভেদাভেদ তার সঙ্গে মেয়েদের নিরাপত্তার অভাব, সময়মতো বাড়ি না পৌঁছালে পরিবারের আতঙ্কের শেষ নেই।
মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে তর্কের শেষ নেই। বেঙ্গালুরুর এক শিল্পী, সমাজসেবক ইন্দু অ্যান্টনি এবং তাঁর বছর ৭৬-এর বন্ধু সিসিলিয়া এক শিল্পকর্মের মাধ্যমেই শুরু করেছেন মেয়েদের নানান সমস্যা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা। তাঁদের প্রজেক্টটি 'সিসিলিয়াদ' নামেই নিরন্তন কাজ করে চলেছে। সিসিলিয়ার প্রসঙ্গেই ইন্দু বলেন, তিনিই এই প্রকল্পের মুখ! এমন সাবলীলতা ঘিরে রয়েছে তাঁকে মানুষজনকে আকৃষ্ট করতে পারেন সহজেই। সিসিলিয়া একজন সেলিব্রিটি, তিনি সাজতে পছন্দ করেন। নিজের পোশাক নিজেই ডিজাইন করে। তাঁর সাজগোজ সাধারণ মানুষকে বেশ আকর্ষণ করতে পারে। ইন্দু বলেন, "মেয়েদের ওঠা বসা, চলাফেরা নিয়ে অনেকেই নানান মতামত পোষণ করেন আর এই বিষয়ে দাঁড়ি টানা বেশ জরুরি। এত বছরের তথাকথিত প্রথা ভেঙে পুরুষতান্ত্রিক ধারণাকে নির্মূল করার বিষয়টি বেশ কঠিন। প্রধানত যে সকল জায়গা মেয়েদের জন্য সুরক্ষিত নয়, আশেপাশের মানুষের নোংরা মানসিকতার শিকার হন সেই সব স্থানেই কাজ করে এই প্রতিষ্ঠান। মেয়েরা বেশিরভাগ সময়ই নানানভাবে যৌণ হেনস্তার শিকার হন তাই তাঁদের নিরাপত্তার অভাব সম্পর্কে জন সচেতনতা অবশ্যই প্রয়োজন।"
প্রসঙ্গত, ইন্দু নিজেও এই হেনস্তার শিকার এবং তারপরেই সিদ্ধান্ত নেন এই সমস্যার শেষ হওয়ার প্রয়োজন আছে। নারীদের নিরাপত্তা এবং তাঁদের হিংস্রতার হাত থেকে বাঁচানোর অনেক প্রয়াস করেও বিফল হয়েছিলেন তিনি, বুঝেছিলেন বেশি মানুষ অবধি কখনওই পৌঁছাবে না এই আর্তনাদ। প্রয়োজন আরও সামঞ্জস্যের আরও কথোপকথনের। তার সঙ্গে পাশে চেয়েছিলেন এমন একজন মানুষকে যার কথা নির্দ্বিধায় মানুষ মুগ্ধ হয়ে শুনবেন। দুজনেই একা বাস করছেন শহরে। সেই অভিজ্ঞতা পরিপূর্ণ। দুজনেই মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা প্রকাশ্যে বলা শুরু করেছেন।
ইন্দুর দৃষ্টিভঙ্গিতে, সমাজের বেশিরভাগ জায়গা পুরুষদের জন্য ভেবেই বানানো। গাড়ির দোকান হোক কিংবা তার পাশাপাশি কোনও হার্ডওয়ারের দোকান বা কাছের অন্যান্য দোকান এসব জায়গায় মেয়েরা সহজে যেতে পারেন না। তাই সবসময়ই এই ভাবনা দেখা দিত কীভাবে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারবেন মেয়েরা। অনেক গবেষণার মাধ্যমে জানতে চেষ্টা করেছেন, কোন জায়গা মেয়েদের জন্য নিরাপদ অথবা কোথায় তাঁরা বেশি সমস্যায় পড়েন। হোটেল, সেলুন এবং বার এসব জায়গায় সিসিলিয়াদ কাজ করতে শুরু করে। আনুষ্ঠানিক শো এবং বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কমিক বই, লিথগ্রফ, পোস্টার সবকিছুর সাহায্য নিয়েছেন। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সাহায্য নিয়েছেন সোশাল মিডিয়ার। নাইট বারেও পৌঁছে যেতেন তাঁরা। মেয়ে হয়েও দাবি করতেন, অ্যালকোহলের, অনেকেই তাকাতেন চোখ কুঁচকে কিন্তু বদল আনার বেশ প্রয়োজন। অনেক সময় ঢুকতেও পেতেন না অন্দরে। তারপরেও হাল ছাড়েননি তিনি।
এখানেই শেষ নয়, চালু করেছেন কথোপকথন ব্যবস্থা। WhatsApp গ্রুপ থেকে টোল ফ্রি নম্বর। মহিলাদের সুরক্ষা সচেতনতায় বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। পুলিশি সহযোগিতায় বেশ তৎপরতায় কাজ চলছে সর্বত্র। রাতারাতি কিছুই বদলাতে পারে না, সময় লাগে অনেক শুধু চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সমাজ জায়গা দেবে না, নিজেকেই করে নিতে হবে। প্রতিদিনের হেনস্তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। এগিয়ে যেতে মাথা উঁচু করে আর মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে এই সচেতনতা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন