দিল্লির দূষণ নিয়ে খবরের কাগজ, গণমাধ্যমে শিরোনাম হওয়া প্রতিবারের মতোই জারি থেকেছে চলতি মরশুমেও। শহর কলকাতা নিয়ে হইচই বরং অনেক কম। কেমন আছে কলকাতা? বাতাসের গুণগত মানের সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স) বলছে মহানগরের অধিকাংশ অঞ্চলের বাতাস বিপদ সীমার ওপরেই রয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, দূষণের ফলে মানবশরীরের ফুসফুসের ওপর খুব ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে।
কী কী সমস্যা হতে পারে
আবহাওয়ার অনিশ্চয়তায় হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, গলা, নাক, চোখ জ্বালার মতো একাধিক সমস্যা, সাধারণ গলাব্যথা, সর্দি-কাশি বা জ্বর ভাব, ফুসফুসের সংক্রমন, ডাস্ট অ্যালার্জি, ভাইরাল জ্বর, ঠান্ডা লাগা, ইত্যাদির মতো একাধিক সমস্যা হতে পারে এই সময়।
আরও পড়ুন, আপনি করোনা আক্রান্ত কিনা কীভাবে বুঝবেন? উপসর্গ মিললে কোথায় যাবেন?
পালমোনোলজিস্ট (ফুসফুস বিশেষজ্ঞ) ডঃ অশোক সেনগুপ্তকে। তিনি জানালেন, “বায়ু দূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি যেটা হয়, কাশি। যাদের সিওপিডি অথবা হাঁপানি রয়েছে, সমস্যা তাঁদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হয়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে দূষণের সরাসরি প্রভাব পড়েছে যাদের ওপর, তাঁদের সার্বিক আয়ু কমেছে। আমাদের শহরে এখনও ডিজেলে চলা যান রয়েছে। এছাড়া নির্মাণ ক্ষেত্র থেকেও মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ছড়ায়। আদালতের নির্দেশকেও বুড়ো আঙুল দেখানো হয় এই শহরে। সাধারণ নাগরিক কিছুটা সচেতন হয়ে ব্যক্তিগত স্তরে দূষণ থেকে দূরে থাকতে পারে, তবে মূল উদ্যোগ নিতে হবে প্রশাসনকেই। আমরা নিজেদের আশেপাশে প্রতিনিয়ত দেখছি, সরকারি পদাধিকারীদের গাড়ি, সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স থেকে দূষণ ছড়ায় সবচেয়ে বেশি। তাঁদেরকে আটকাবে কে”?
এই দূষণের মোকাবিলায় কী করবেন
১. র্যাপিড চেঞ্জ অফ টেম্পারেচর, অর্থাৎ কড়া রোদ থেকে সঙ্গে সঙ্গে এসিতে বা এসি থেকে সঙ্গে সঙ্গে রোদ – এই ধরনের বদল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
২. কড়া রোদে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন।
৩. ঠান্ডা পানীয় এড়িয়ে চলুন।
৪. অ্যাজমা-সিওপিডি রোগীরা এই সময় একেবারেই ওষুধের অনিয়ম করবেন না। সঙ্গে সবসময় ইনহেলার রাখুন, যাঁদের ডাস্ট অ্যালার্জি রয়েছে তাঁরা সবসময় মাস্ক ব্যবহার করুন, অন্যরাও প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করুন। যতটা সম্ভব ৫. বাড়ির জল সঙ্গে রাখুন
৬. সাধারণ গলাব্যথা, সর্দি-কাশি বা জ্বর ভাব লাগলে প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন, তবে যাঁদের অ্যাজমা বা ৭. ওই জাতীয় সমস্যা রয়েছে তাঁরা দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৮. যাঁরা বিভিন্ন কারণে মফস্বল থেকে কলকাতায় আসছেন তাঁরা বিশেষত সতর্ক থাকুন। কারণ আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে
৯. সকালে হালকা ব্যায়াম করুন
১০. যাঁদের ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা নিউমোকক্কাস ভ্যাকসিন নিন চিকিৎসকের পরামর্শে
প্রসঙ্গত, ছোটদের এবং বৃদ্ধদের যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, সে কারণে ভাইরাস জ্বর, ঠান্ডা লাগা, বিভিন্ন সংক্রমনের আশঙ্কা বেশি থাকে। কাজেই এই সময়টা ওদের বেশি নজরে রাখা প্রয়োজন।
শেষে
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে পাঁচ বছর বয়সের নিচে যত শিশু মারা গিয়েছে, তাদের এক চতুর্থাংশের মৃত্যুর কারণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বছরে প্রায় ৬ লক্ষ শিশুর (যাদের বয়স ১৫ বছরের নীচে), মৃত্যুর কারণ বায়ুদূষণ। পাশাপাশি রয়েছেন অন্যান্য বয়সের মানুষও। প্রতিনিয়ত ফুসফুসে বিষ মেশাচ্ছে বায়ু। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা বলছে, সারা পৃথিবীতে যত সংখ্যক মানুষ ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত হন, তার ৩২ শতাংশই ভারতীয়। এ দেশের মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ইশ্চেমিক হার্ট ডিজিজ (হৃদজনিত রোগ)-এ। কাজেই বায়ু দূষণের এই ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হোন আজই।
ডাঃ অশোক সেনগুপ্ত
এমডি (কলকাতা), এমারসিপি (ইউকে), পিএসিইএস, কনসালট্যান্ট রেসপিরেটরি মেডিসিন