কঠিন সময়। করোনা সংক্রমণ আটকানোর জন্য সারা দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। রাস্তা শুনশান। সূচ পড়লেও শব্দ পাওয়া যায়। বসন্ত পেরিয়ে গ্রীষ্ম এসেছে। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়ায় ভরেছে কলকাতার আশপাশ। প্রকৃতির রূপ রস লাবণ্যে কোথাও এতটুকু খামতি নেই। তবু আশ্চর্য রকম থমথমে চারপাশ। পাখীরাও যেন ডেকে ডেকে ক্লান্ত। আর রাস্তার কুকুর বেড়াল ক্রমশ রুগ্ন হয়ে আসছে। কারণ একটাই, খাবার নেই। শহরের কোথাও কোথাও ছবিটা আরও ভয়ঙ্কর। না খেতে পেয়ে রাস্তার ছোট বেড়াল খেয়ে নিচ্ছে পাড়ার কুকুর। মানুষের এই ভয়ে ভয়ে দিন গুজরানের শেষ কবে, কেউ জানে না। ভালো দিনের শুরু কোথায়, তা নিয়েও গভীর অনিশ্চয়তা। তবে এই অন্ধকার সময়েও কি পথের পশু পাখীদের প্রতি একটুও সংবেদনশীল হতে পারি না আমরা?
আলোর অপেক্ষায় বসে থাকা এই সময়েই কথা হল শ্রেয়া বসুর সঙ্গে। কলকাতা শহরেই নিজের বাসভবনে একটি অভয়ারণ্য তৈরি করে ফেলেছেন। রেইনিং উলভস স্যাংচুয়ারি। কী বললেন শ্রেয়া? "প্রথমে বুঝে নিতে হবে কুকুর বেড়ালের থেকে করোনা ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হয় না। কুকুরের যে করোনা ভাইরাস হয়, আর মানুষের যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হচ্ছে, দুটি সম্পূর্ণ পৃথক। তাও ভারতীয় কুকুরদের করোনা ভাইরাস হয় না, তবু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে কখনও ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়। সুতরাং আতঙ্ক অমূলক। এবার আসি খাবার দেওয়ার কথায়। লকডাউনের পরিস্থিতিতে সবার ঘরেই চাল ডাল বাড়ন্ত। তাই যে যার ক্ষমতা অনুযায়ী খেতে দেবেন। রাস্তার কুকুর বেড়াল খুব কিছু খায় না। বাড়ির ডাল ভাত, মুরগির মাংসের ছাট, বিস্কুট এসবই খায়। তাই দিনের বেলা রান্না করার সময় একমুঠো বাড়তি খাবার রান্না করলে অসুবিধে হবার কথা নয়।
রাস্তার কুকুরকে খাবার দেওয়ার সময় কী করতে হবে?
ব্লিচিং পাউডার থাকলে সেখানে কুকুরকে খাবার দেবেন না, কুকুরের দেহে বিষক্রিয়া হতে পারে
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
দুজন করে পাড়ার কুকুরদের জন্য খাবার দিতে বেরোন, অবশ্যই মুখে মাস্ক পরে
একজন খাবার নিন, একজন জল
পেভমেন্ট পরিষ্কার থাকলে সেখানে জল দিয়ে ধুয়ে দিন
যে পাত্রে কুকুরদের খাবার দিচ্ছেন, খাওয়া হয়ে গেলে যথাস্থানে ফেলে দিন
মাটির সরাতে জল রেখে দিলে সবচেয়ে ভালো, দিনে একবার সেই জল এবং পাত্র পরিষ্কার করুন
বাড়ি ফিরে নিজেকে স্যানিটাইজ করতে ভুলবেন না
পাখীদের জন্য কী ভাবে খাবার রাখবেন?
নারকেলের খোলায় ফুটো করে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে একটি পাত্রে জল, একটিতে খাবার ঝুলিয়ে রাখবেন
পাখী কিন্তু প্রথম দিকেই আসবে না, ওরা একটু ইতস্তত করবে
পাখীদের খাবার সকালের দিকে দিন
একটি পাত্রে জল, অন্য পাত্রে চিড়ে, পাউরুটির গুড়ো, ভাত রাখুন
জলে একটু চিনির ডেলা দিয়ে রাখলে পাখীদের ডিহাইড্রেশন হয় না