আজকাল বেশির ভাগ পরিবার নিউক্লিয়ার। মা-বাবা-আর বাড়ির এক এবং একমাত্র খুদে সদস্যকে নিয়ে সুখী সংসার। পুজোর আগ দিয়ে সে সব পরিবারের বাচ্চাদের মাস জুড়ে পরীক্ষা থাকে, উইক এন্ডে শপিং মল থাকে, শারদীয়ার ব্যস্ততায় একটু আধটু বাদ পড়া সুইমিং ক্লাস আর টিউশন থাকে। এটাই এই প্রজন্মের প্রাক পুজোর স্বাদ, একা একা কাটানো শৈশবের শরত-বিকেল। অথচ দু'দশক আগেও মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনে দুর্গা পুজো আসত অনেক হৈচৈ, খাতার নীচে লুকিয়ে রাখা পূজাবার্ষিকী, সন্ধে গড়িয়ে যাওয়ার পরেও বাড়ি ফেরার ছাড়টুকু নিয়ে। সেই আনন্দ অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে আধুনিক জীবনে।
কিছুদিন আগেও শহর মফঃস্বলে বেড়ে ওঠা সবুজ মন গুলো পুজো এলেই ভাবত, "আজ হাসি খুশি মিথ্যে হবে, তোমাকে বাদ দিয়ে"। ক্রমশ গতি বাড়তে থাকা, প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকা শৈশব আজ সেই সুর থেকে মুখ ফিরিয়েছে। আপনার সোনালি দিন গুলো কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না আপনার সন্তানের শৈশব-কৈশোরে? উৎসবের মরশুমে অন্তত একটু অন্যরকম করে তুলুন ওর কচি মনটুকু।
আরও পড়ুন, সন্তান উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছে, বুঝবেন কীভাবে?
পুজোর কটা দিন পরিবারের সবাই একসাথে কাটান
বড় পরিবারে, কাকা জেঠু, মাসি-পিসিরা সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন দেশে বিদেশে। পুজোর কটা দিন কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। ফ্যামিলি গেটটুগেদারের ব্যবস্থা করুন। দশটা-পাঁচটার অফিস করে হাঁপিয়ে ওঠা মা বাবারা শুধু নিজেদের সঙ্গে সময় কাটাবেন ভেবেছিলেন? খবরদার সেটি করবেন না। সন্তানের সঙ্গে আপনার পরিবারের বাকি সদস্যদের টান তৈরি করতে হবে। পুজোর দিনগুলোতে স্কুল-কলেজ-অফিস-কাছারি থাকে না, তাই এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। আর কাউকে কাছে না পেলেও খেয়াল রাখুন দাদু-দিদা অথবা ঠাকুরদা ঠাকুমা স্থানীয় মানুষকে যেন কাছে কাছে পায় আপনার সন্তান।
ব্র্যান্ড সচেতনতা যেন না আসে আপনার বাচ্চার মধ্যে
আপনার একরত্তি সন্তান যে খুবই আদরে মানুষ হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বৈভব কী, ছোট থেকেই তার সম্পর্কে যেন সচেতন না হয় আপনার ছেলে অথবা মেয়ে। পুজোর দিনগুলোতে পাড়ার সব কচিকাঁচার সঙ্গে মিশতে দিন ওকে। আনন্দ ভাগ করে নিতে দিন সবার সঙ্গে। ওই ৫ টা দিন বাড়িতে থাকুক আপনার সাঙ্গপাঙ্গদের অবাধ আনাগোনা। আর কার পোশাক কত দামি, অথবা সস্তা, সেই বোধ যেন তৈরি না হয় আপনার বাড়ির খুদেটির মধ্যে। বছরের অন্যান্য সময়ে যে দিদি আপনার বাড়িতে রান্না করেন, যে রিক্সাচালক আপনাদের পৌঁছে দেন বাস স্ট্যান্ডে, তাঁদের ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনি থাকলে, পুজোর মধ্যে সবাই মিলে অন্তত একদিন বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করুন। সন্তানের মধ্যে খেলার সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শ্রেণি সচেতনতা যেন না আসে।
সিলেবাসের বাইরে পূজাবার্ষিকীতে কাটুক এই ক'টা দিন
বাংলায় বড় হচ্ছে, কিন্তু অবশ্যই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে, এখন এটাই দস্তুর। কিন্তু পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলা, শুকতারা, কিশোরভারতী ছাড়া আপনার যে পুজো অসম্পূর্ণ থাকত, সেই আনন্দ থেকে আপনার সন্তানকে বঞ্চিত করবেন না। নিজে বাংলা পড়তে না পারলে আপনিই পড়ে শোনান একটু একটু করে। রাতভর গারি করে ঠাকুর দেখা ছাড়াও পুজোর দিনগুলোতে শৈশবের সোনালি স্মৃতি তৈরি করতে সাহায্য করুন আপনার সন্তানকে। আর শেখান বই ভাগ করে নিতে। দেদার বই দেওয়া নেওয়া চলুক ওই ক'টা দিন।