চোখগুলো বড় বড়, চেহারা দেখে মনে হবে যেন কোনও অশরীরীর। হ্যাঁ, তবে এ চেহারা তার মুখোশ মাত্র। মুখোশের আড়ালে কে বা কারা? এ নিয়ে এই মুহূর্তে মাথাব্যথা পুলিশ-প্রশাসনের। তবে এমন অদ্ভুতূড়ের ছবি লাগানো ডিপিই হোয়াটস অ্যাপের নয়া আতঙ্ক। ‘‘হাই, দিস ইজ মোমো’’, এমন ভাবেই সে শুরু করছে আলাপচারিতা। যা দেখে আট থেকে আশি, সকলের কৌতূহলই নজর কাড়ছে। কেউবা ঘাবড়ে গিয়ে ভয়ে একসা হয়ে নম্বরখানা হোয়াটস অ্যাপের ব্লকলিস্টে সেভ করেছেন। হ্যাঁ, নম্বরটা একদম অচেনা, শুধু তাই নয়, এ দেশের নম্বরও নয় মূলত।
মোমো বলতেই যে লোভনীয় পদের কথা প্রথমে মাথায় আসে আমাদের। সেই প্রিয় খাবারের নাম ভাঁড়িয়ে এ নেট দুনিয়ার নয়া মারণগেম মোমো চ্যালেঞ্জ। হ্যাঁ, একবার এই গেম খেলা শুরু করলেই বিপদ! ব্লু হোয়েলের পর এবার আরেক মারণগেমের নেশা ছড়িয়েছে এ রাজ্যেও। জলপাইগুড়ির খরদাপাড়ার এক তরুণীর ফোনে মেসেজ করেছিল ‘মোমো’। যে ঘটনায় হস্তক্ষেপ করছে জলপাইগুড়ি থানা। কলকাতার এক মহিলারর হোয়াটস অ্যাপেও এ ধরনের মারণগেম খেলার প্রস্তাব এসেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। যে ঘটনার তদন্তে নেমেছে সাইবার সেল।
কিন্তু আদপে এই মোমো চ্যালেঞ্জ কী? জবাবে সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত জানালেন,‘‘একটা অদ্ভুত ধরনের ছবি ডিপিতে লাগিয়ে এ ধরনের মারণগেম খেলার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, যা নেটদুনিয়ায় এই মুহূর্তে ছড়িয়ে গিয়েছে। ওরা প্রধানত সোশ্যাল মিডিয়ার ইউজারদের টার্গেট করছে। যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন, ‘ভাল লাগছে না’ বা ‘বাঁচতে চাই না আর’ এর মতো অবসাদের কথা, তাঁদেরই প্রধানত ওরা টার্গেট করে এই গেম খেলার প্রস্তাব দিচ্ছে। হোয়াটস অ্যাপে লিঙ্ক বা ফাইল পাঠাচ্ছে।’’
মোমো চ্যালেঞ্জ নিয়ে কী বললেন সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত? #MomoChallenge #ieBangla pic.twitter.com/Y9Ho6QpfYy
— IE Bangla (@ieBangla) August 26, 2018
এই লিঙ্ক বা ফাইলেই লুকিয়ে রয়েছে বিপদ! এ প্রসঙ্গে সাইবার বিশেষজ্ঞ জানালেন,‘‘কেউ এই লিঙ্ক বা ফাইলে ক্লিক করলেই স্পাইওার ডাউনলোড হয়ে যাবে। ফলে যিনি গেমটি খেলছেন, তাঁর মোবাইলটি পুরোপুরি ওই মারণগেম কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। অজান্তেই সংশ্লিষ্ট মোবাইলের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন চালু করে নিতে পারে প্রতারকরা। যার জেরে অজান্তেই আপনার এমএমএস ক্লিপ বানিয়ে নিতে পারে। যা নিয়ে পরে ব্ল্যাকমেল করতে পারে।’’
আরও পড়ুন, Momo challenge: কার্শিয়াঙে ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু, মোমো চ্যালেঞ্জের শিকার বলে সন্দেহ
কীভাবে এড়াবেন মোমো চ্যালেঞ্জ? উপায় বাতলালেন ওই সাইবার বিশেষজ্ঞ।
১. সব স্কুলে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো দরকার।
২. কোনও ফাইল বা লিঙ্কে ক্লিক করবেন না
৩. কোনও ফাইল ডাউনলোড করবেন না
৪. অজানা নম্বর থেকে কোনও মেসেজ এলে উপেক্ষা করুন
৫. এ ধরনের মেসেজ পেলে, ব্লক করুন নম্বরটি।
৬. এমন মেসেজ পেলে পুলিশকে জানান।
৭. বাচ্চারা কী গেম খেলছে, সেদিকে নজর রাখুন।
তবে ওই অদ্ভুতূড়ের ছবির সঙ্গে এই গেমের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানালেন সন্দীপবাবু। এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন,‘‘এটা জাপানের কোনও একটা ছবি, এর সঙ্গে এই গেমের কোনও সম্পর্ক নেই। ওরা ওই ছবিটা ব্যবহার করেছে মাত্র।’’
যদি কেউ না বুঝেই এই গেমের শিকার হন এবং পরে বোঝেন যে তিনি মোমো চ্যালেঞ্জের ফাঁদে পা দিয়েছেন, তখন কী করণীয়? জবাবে সাইবার বিশেষজ্ঞ বললেন,‘‘কনটাক্ট ও মেসেজ ব্যাক আপ নিয়ে রিসেট করলে রিস্টোর করলেই হবে।’’
আরও পড়ুন, মোমো চ্যালেঞ্জ গেমের হানা জলপাইগুড়িতে, জারি সতর্কবার্তা
ব্লু হোয়েল বা মোমো চ্যালেঞ্জ, এ ধরনের মারণগেম রুখতে আইন কী বলছে? জবাবে আইনজীবী কৌশিক চট্টোপাধ্যায় জানালেন,‘‘ সাইবার অপরাধের ধারার সঙ্গে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ধারা যোগ করে সাজা দেওয়া যাবে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় ১০ বছর পর্যন্ত কারাবস হতে পারে। এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি আইনে ৬৫, ৬৬এ, ৬৭ ধারাও যোগ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ২ বছর বা ৫ বছর পর্যন্ত সাজা ও ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার কথা বলা হয়েছে।’’ তবে এ ব্যাপারে সমাজের সামগ্রিক স্তরে সচেতনতা বাড়ানোই প্রয়োজন বলে মনে করেন ওই আইনজীবীও।