প্রযুক্তির যুগে আজকাল অনেক অফিসেই 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' অর্থাৎ বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ দেয়। এতে সুবিধে অনেক। ছোট খাট কাজ থাকলে ছুটি নিতে হয় না, অফিস যাতায়াতের সময় বেঁচে যায়। কিন্তু মূল সমস্যা হল, বাড়িতে অফিসের পরিবেশ তৈরি করা। বড় বাড়ি হলে না হয়, ঠিক আলাদা ব্যবস্থা করে নেওয়া হয়, মুশকিল হয় ছোট ফ্ল্যাট হলে।
শোয়ার ঘরে অফিস বানানোর কথা ভাবছেন? রাত তিনটে চারটে পর্যন্ত জেগে কাজ করবেন, ফোন রিসিভ করবেন, গণ্ডা গণ্ডা ইমেলের জবাব দেবেন, এদিকে আপনার নিজের সন্তান এবং তার মা অথবা বাবার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে তো। আপনি না হয়, পরের সকালে ঘুমিয়ে পুষিয়ে নেবেন। কিন্তু বাকিদের যে সকাল হলেই শুরু হয়ে যাবে ব্যস্ততা। আবার রান্নাঘর অথবা খাওয়ার ঘরে শিফট করবেন ভাবছেন? মেদ বাড়তে বেশি নয়, সাত দিন সময় লাখবে। পাকশালে কাজ হবে, তাও আবার পেটপুজো ছাড়া? বাঙালির কলঙ্ক নাকি আপনি?
আরও পড়ুন, কতক্ষণ ফোনে থাকেন, তা থেকেই আঁচ করা যায় আপনার চরিত্র
অগত্যা আপনার ঠাই হল বেসমেন্টে। খানিক রঙ টং করে সাজিয়ে গুছিয়ে বসলেন সেখানেই। এবার সমস্যা জানলা। সেলুলার জেলের গারদের কথা মনে পড়বেই পড়বে। নিজেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীও ভেবে ফেলতে পারেন। খোপ কাটা জানলার মধ্যে দিয়ে যতটা আলো আসে, তাতে আর যাই হোক কাজ করা যায় না।
সম্প্রতি 'সাইকোলজিকাল সায়েন্স ইন দ্য পাবলিক ইন্টারেস্ট' জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল টেলিকমিউনিকেশনের মাধ্যমে অফিসের কাজ হলে পারিবারিক জীবন আর কর্মজীবনের গণ্ডীটা মুছে যায় এবং সেখান থেকেই পারিবারিক জীবনে সমস্যা শুরু হয়ে।
এই প্রসঙ্গে আর্কিটেক্ট ডোনাল্ড এম র্যাটনার জানিয়েছেন, "আমরা আমাদের কাজের জায়গা নিয়ে যথেষ্ট ভাবি না। কাজ করতে যাতে ভালো লাগে, বাড়ির নির্দিষ্ট কোনও ঘরকে সেভাবেই বানানো উচিত। সঙ্গে জুতসই রঙ, আলো, ছবি, হালকা মিউজিক দিয়ে কাজের জায়গাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। সোফা কিমবা কাউচের ওপর বসে পেটের অপর কুশন চেপে কাজ করলে না হয় অফিসের কাজ, না ঠিকমতো উপভোগ করতে পারেন বাড়ির মেজাজ। অফিসের খারাপ, অস্বাস্থ্যকর দিকগুলো ঝেরে ফেলে প্রয়োজনীয় দিকগুলোকে বরং রেখে দিন।
আরও পড়ুন, ফেসবুক আঁকড়ে থাকেন ‘নিতান্তই সাধারণরা’, বলছে গবেষণা
নীচে দেওয়া হল ঘরেই অফিস বানানোর সহজ কিছু টিপস
১) অফিসের রিভলভিং চেয়ারের বদলে বাড়িতে কাঠের চেয়ারে বসুন। আপনার কোমরের পক্ষে ভালো।
২) কম্পিউটার টেবিলে ল্যাপটপ রেখেই কাজ করুন। অর্থাৎ ওই চেয়ার টেবিলে বসলেই আপনার মধ্যে যেন কাজ করার মানসিকতা চলে আসে।
৩) ডেস্কে রাখতে পারেন ইনডোর প্লান্ট। যে ঘর কাজের জন্য বেছে নিচ্ছেন, সেখানে যেন বড় জানলা থাকে। জানলা দিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পেলে মন ভালো রেখে কাজ করতে পারবেন।
৪) বাড়িতে কাজ করার সময় এক ঘণ্টা অন্তর ছোট বিরতি নিয়ে পরিবারকে সময় দিন। অল্প হাঁটাহাঁটি করুন।
৫) কাজের সময় কম ভলিউমে ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক চালিয়ে রাখতে পারেন। এতে কাজেও মনঃসংযোগ করা যায়।