শৈশবের স্কুল কিমবা খেলার মাঠের কচি কচি মুখগুলো চোখে ভাসে? কলেজের রোল কলের সময়টা এখনও স্মৃতি খুঁড়ে বের করে আনেন মাঝেসাঝেই? অথবা কাজের মাঝে মাঝে অবসর পেলেই স্মৃতিতে টান পড়লে বুঝতে পারেন না, কোনটা বেশি তলিয়েছে বিস্মৃতির অতলে? এমনটা হয় তো? হতেই পারে, শরীরে, মনে এবং মগজে সময় যখন ফন্দি আঁটতে শুরু করে, তখন এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
আমাদের রোজকার জীবনে একটু বয়স বাড়লেই জেঠু মামা মাসিরা বলে থাকেন বয়সের ভারে, নাম ধাম মনে রাখা দায়। আমাদের মধ্যে এমন একটা ধারণা তৈরি হয়ে গেছে, মুখের চাইতে অনেক দ্রুত নাম ভুলতে শুরু করি আমরা। সম্প্রতি এক সমীক্ষা বলছে ঠিক উল্টোটা। নাম যত তাড়াতাড়ি বিস্মৃতিতে চলে যায়, তার থেকে অনেক সহজে আমরা ভুলে যাই মানুষের মুখ।
ব্রিটেনের ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, "একটা মানুষ যখন জোর করে কোনো নাম ভুলতে চায়, তখন মগজকে অনেকটা চাপ নিয়ে হয়। কারণ আমাদের মস্তিষ্কের 'রিকল'-এর চেয়ে 'রেকগনিশন'এর ক্ষমতা অনেক বেশি হয়। নাম যে ভুলে গেছি, সেটা অনেক আগে বুঝতে পারি আমরা, কিন্তু মুখ মনে নেই, এটা অনেক সময় মাথাতেই আসে না। কারণ 'রেকগনিশন' ক্ষমতার জেরে মুখ মনে পড়ে যায়, আর তখনই বুঝে যাই আমরা, চোখে ভেসে ওঠা মুখগুলোর অনেকেরই নাম মনে নেই আমাদের"।
গবেষকরা বলছেন, "যারা ভাবেন খুব সহজেই নাম ভুলে যান, ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে তারা মানুষের মুখ আরও তাড়াতাড়ি ভোলেন"।
কোয়ার্টারলি জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি-তে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি। সমীক্ষায় অংশ গ্রহণ করা মানুষদের কিছু অপরিচিতের ছবি দেখানো হয়েছিল, সঙ্গে মনে রাখতে বলা হয়েছিল বেশ কিছু নাম। ৮৩ শতাংশ নাম মনে রাখতে পেরেছেন প্রতিযোগীরা। মুখ মনে রাখতে পেরেছেন ৭৩ শতাংশ। একই ব্যক্তির অন্য ছবি দেখানো হলে চিনতে পেরেছেন মাত্র ৬৪ শতাংশ।
৪০০ বছর আগে শেক্সপিয়র-এর প্রবাদ বদলে এখন তবে বলাই যায়, 'মুখে কি বা আসে যায়!'
Read the full story in English