জীবনে প্রত্যেক মানুষই জনপ্রিয়তা চান। বিশেষ করে কিছু বিশেষ পেশার জন্য এই জনপ্রিয়তা অত্যন্ত দরকারি। তবে, সেজন্য কিছু নীতি ও নিয়মকানুন পালন করতে হয়। কী সেই নীতি বা নিয়ম কানুন, তা স্পষ্ট করে বলে দিয়ে গিয়েছেন আমাদের দেশের মুনি-ঋষিরা। আর, তাঁদের কথা মানলে আপনার জীবনেও জনপ্রিয়তা আসতে বাধ্য। অল্পকথায় সেই নীতিকে শ্লোকের আকারে তুলে ধরলে বলতে হয়, 'ন কিঞ্চিৎ কস্যচিন্মিত্রং ন কশ্চিৎ কস্যচিদ্ রিপুঃ। ব্যবহারেণ জায়ন্তে মিত্রাণি চ রিপবস্তথা।'
উপরের এই শ্লোকের বঙ্গানুবাদ হল, কিছু না-ঘটলে কেউ কারও বন্ধু বা শত্রু হতে পারে না। নির্দিষ্ট কারণেই মানুষ একে অপরের শত্রু বা মিত্র হয়ে ওঠে। শাস্ত্র যা বলেছে, সেকথা এই শ্লোকের মাধ্যমে আমাদের কাছে সহজ ও সরল ভাষায় তুলে ধরেছেন মহামতি চাণক্য। তিনি নিজে শাস্ত্রের এই নীতি মেনেই নিজের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁর প্রধান শিষ্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যও এই শিক্ষাতেই শিক্ষিত হয়ে মৌর্য সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন।
কী বলেছিলেন, চাণক্য? তিনি যেটা বলতে চেয়েছেন, তা হল- সহজাত শত্রু বা মিত্র বলে সমাজে কিছু হয় না। বরং, অন্যান্য প্রাণীর জগতে আমরা এরকম কিছু সহজাত শত্রুতা দেখতে পাই। কিন্তু, সেটা তৈরি হয় প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম বা খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক থেকেই। সেই হিসেবে দুর্বল প্রাণ সবল প্রাণীর আহার্য বস্তু বলেই তাদের মধ্যে জন্মকালীন শত্রুতা তৈরি হয়। আবার জীব জগতের মধ্যে যারা তৃণভোজী প্রাণী, তাদের মধ্যে কোনও শত্রুতা থাকে না।
আরও পড়ুন- জীবনকে ব্যর্থতা ঘিরে ধরেছে? হতাশ না-হয়ে কীভাবে উন্নতি করবেন জেনে নিন
চাণক্য মনে করতেন, মানুষের সমাজেও সেভাবেই কোনও জন্মশত্রু বা জন্মমিত্র তৈরি হয় না। দীর্ঘদিন একইসঙ্গে বসবাস করতে করতে সামাজিক বিভিন্ন কারণবশতঃ কোনও কোনও মানুষ পরস্পরের খুব কাছে আসে। তখন স্বাভাবিক মিত্রতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আবার, বিশেষ সামাজিক, অর্থনৈতিক অথবা রাজনৈতিক কারণে পরস্পর পরস্পরের থেকে দূরে সরে যায়। তখনই তাদের মধ্যে শত্রুতা গড়ে ওঠে। কিন্তু, এই শত্রুতা বা মিত্রতা যে সারাজীবন স্থায়ী হবে, তা-ও কিন্তু, নয়। তাই চরম শত্রুও হয়ে উঠতে পারে মিত্র। আবার মিত্রও কখনও শত্রু হয়ে উঠতে পারে। কোনওটাই বিনা কারণে হয় না। তাই, কারণ দূর করলেই শত্রুতার অবসান ঘটবে। আর, মানুষ মিত্রতার কারণ তৈরি করলে হয়ে উঠবে জনপ্রিয়।