তিনি শুধু চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকেই পথ দেখাননি। মহামতি চাণক্য তাঁর নীতিশাস্ত্রের মাধ্যমে অসংখ্য ব্যক্তিকে পথ দেখিয়েছেন। যা যুগ যুগ ধরে এই ভারতের বহু প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির চলার পথে দিশারি হয়ে থেকেছে। আর, সেই কারণেই চাণক্যের নীতিশাস্ত্রকে পাথেয় করে এগিয়েছেন সমাজের সর্বস্তরের বহু সফল ব্যক্তি। তাঁর এই নীতিকথায় চাণক্য জীবনের নানা পর্যায়ের কথা ভেবে উপদেশ দিয়েছেন। মৌর্যযুগে তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিরস্মরণীয় এই শিক্ষক যেন জীবনের প্রতিটিস্তরকে অত্যন্ত কাছ থেকে খুঁটিয়ে দেখেছেন। আর, সেই অনুযায়ী চলার পথের হদিশ দিয়ে গিয়েছেন বর্তমান আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছাত্রদের।
যেমন তিনি উপদেশ দিয়েছেন- 'রূপযৌবনসম্পন্না বিশালকূলসম্ভবাঃ, বিদ্যাহীনা ন শোভন্তে নির্গন্ধা ইব কিংশুকা।' যার বঙ্গানুবাদ করতে হয়- যে ব্যক্তি অত্যন্ত রূপবান ও যৌবন সম্পন্ন এবং উচ্চ বংশজাত কিন্তু, বিদ্যাহীন। সেই ব্যক্তি কিংশুক ফুলের মতই গন্ধহীন। তাঁর এই উপদেশের অর্থ, কোনও ব্যক্তি রূপবান হতে পারেন। সুন্দর দেখতে হতে পারেন। কিন্তু, সেটাই তাঁর জীবনের শেষ কথা নয়। এমনকী, তিনি যদি উচ্চবংশে জন্মান, তাতে কিছু যায় আসে না, যদি তিনি বিদ্যাহীন হন। সেক্ষেত্রে, সমাজ ও সংসারে তাঁর কোনও দাম থাকে না।
কারণ, উচ্চবংশে জন্মালে সেই ব্যক্তিকে লোকে বংশপরিচয়ের জেরে চেনে। কিন্তু, সেই ব্যক্তি বিদ্যাহীন হলে, তাঁকেই আবার ওই উচ্চবংশের কলঙ্ক মনে করে থাকে। আবার সেই বিদ্যাহীন ব্যক্তি যদি দেখতে সুন্দর হন, তাঁকে মাকাল ফল বলেও কটাক্ষ করে থাকেন লোকজন। সেটা আড়ালে, আবডালে হলেও। এক্ষেত্রে বিদ্যা মানে শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যার কথা চাণক্য বলেননি। কোনও নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শিক্ষা বা অধিকৃত দক্ষতার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
আরও পড়ুন- চাণক্যের এই উপদেশ, যা মানলে সঙ্গী বাছতে ভুল হবে না আপনার
তাঁর মূল বক্তব্য, কোনও বিষয়ে জ্ঞান না-থাকলে, সেই ব্যক্তির প্রতি মানুষের মনে শ্রদ্ধা জাগে না। অর্থাৎ, তিনি মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারেন না। তাঁকে কিংশুক বা পলাশ ফুলের মতই সকলে গন্ধহীন বলে মনে করেন। পলাশ ফুলকে তার রূপের জন্য সকলে দেখে। কিন্তু, গন্ধ না-থাকায় তাঁকে পূজার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। মূর্খ ব্যক্তিও সেই ভাবেই কারও কোনও উপকারে লাগেন না। সকলেরই বোঝা হয়ে থাকেন। এমনটাই বোঝাতে চেয়েছেন চাণক্য।