Advertisment

"গায়ক না হয়ে যদি বক্সার হতাম, আমায় কি ঘরোয়া আসরে ঘুষি মেরে দেখাতে হত?"

বাংলা গান তেমন কখনই শুনিনি ছোটবেলায়। এখনও তেমন শুনিনা। পাশ্চাত্য রক-পপে আগ্রহ ছিল বরাবর। হরিশ্চন্দ্রপুরের সেই দিগন্ত বিস্তৃত সবুজে চোখ ডুবিয়ে পুজোর পাঁচদিন বনি এম শুনতাম প্রাণ ভরে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পুজোয় নতুন জামা কাপড় রইল, সাহিত্যে পুজো সংখ্যা রইল, গানের ক্ষেত্রে পুজোর গান হারিয়ে গেল কেন? প্রশ্নের উত্তরে আক্ষেপ ঝরে পড়ল যে মানুষটার গলায় তাঁর নাম সৌমিত্র রায়।

Advertisment

বাঙালি শ্রোতার কাছে তিনি পরিচিত 'ভূমির সৌমিত্র' হিসেবে। তাঁর কথায় "বাজারে মোটামুটি সিডি-ক্যাসেট তো উঠেই গেছে। গানের জগতে এখন ডিজিটাল লঞ্চটাই ট্রেন্ড। আর সেটা যে কোনো সময়েই হতে পারে, তাই আলাদা করে 'পুজোর গান' এই ধারণাটাই আর নেই। যে পারছে, গান গাইছে, ইউটিউবে আপলোড করছে। মাঝে মাঝেই অনুরোধ আসে আমার কাছে, 'দাদা, এই গানটা গেয়েছি, একটু শুনে বলবেন কেমন লেগেছে'। সে সব বেশির ভাগই শোনার মতো নয়। পুরো সুরের দুনিয়াটা এখন এক ইঞ্চির পেন ড্রাইভে বন্দী। শিল্পীর এক একটা গান সোশাল মিডিয়ায় হিট হচ্ছে ভীষণ রকম, ব্যাস, ওই একটা গান দিয়েই শিল্পীকে বুঝে নিচ্ছি আমরা"।ডিজিটাল জমানাতেও গানের জগত থেকে সৌমিত্র রায়কে অবশ্য 'ভূমিহীন' করতে পারেননি কেউই।

আরও পড়ুন, পুজোর বই পড়া: শারদ সাহিত্য, তোমার দিন গিয়াছে?

পুজো নিয়ে বাঙালির একটা নস্টালজিয়া তো আছেই। তবে আমার কাছে পুজোর স্মৃতিটা আর পাঁচটা বাঙালির থেকে একটু আলাদা। দার্জিলিং-এর বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছি। পুজোর পাঁচটা দিন মালদার হরিশচন্দ্রপুরের দেশের বাড়িতে ফিরতাম। একান্নবর্তী পরিবার, তায় আবার নিজেদের বাড়িতে পুজো। একেবারে হৈহৈ ব্যাপার। পুজোয় উপহার হিসেবে সেজ জেঠু দুটো রেকর্ড দিতেন। জেঠুর রেকর্ড প্লেয়ারেই চালানো হতো সে সব। পাশ্চাত্য রক-পপে আগ্রহ ছিল বরাবর। হরিশ্চন্দ্রপুরের সেই দিগন্ত বিস্তৃত সবুজে চোখ ডুবিয়ে পুজোর পাঁচদিন বনি এম শুনতাম প্রাণ ভরে। বাংলা গান তেমন কখনই শুনিনি ছোটবেলায়। এখনও তেমন শুনিনা। কিন্তু লোক সঙ্গীতের প্রতি টানটা জন্মেছিল বাবার কাছে শুনে শুনে। উদাত্ত কন্ঠে বাবা গান গাইতেন। বাবার কাছে শেখা আমার প্রথম গান "হে ভবসাগর"। এখন গজল খুব শুনি। আবিদা পরভিন, জগজিৎ সিং। জগজিতের গান শুনলে মনে হয় ঠিক যেন আমার হাত ধরে গাইছেন।

আমি পার্টিতে খুব একটা যাই না কোনোদিন। দু-একটায় গেলে এখনও লোকে এসে বায়না করে, "সৌমিত্রদা একটা গান হয়ে যাক", এটা থেকে বুঝি বাঙালির আড্ডার চরিত্র খুব কিছু পাল্টায়নি। তবে মাঝে মাঝে বিরক্তও যে লাগে না, তা নয়। গান গাইব না কাবাব খাব, বুঝতে পারি না তখন। আবার মজলিসের মেজাজ বুঝে একটা গজল ধরেছি কী ধরিনি, ও দিক থেকে ফরমায়েশ এল, 'বারান্দায় রোদ্দুর হয়ে যাক'। আরে মশাই গায়ক না হয়ে যদি বক্সার হতাম, আমায় কি ঘরোয়া আসরে ঘুষি মেরে দেখাতে হত?

বিগত ১৯ বছর পুজোয় দেশের বাড়ি যাইনি। কখনও দিল্লি, মুম্বই, কখনও ইউএসএ-তে কেটেছে। এবারও দিল্লিতে থাকছি। মঞ্চে মঞ্চেই কাটবে পুজো। পুজোর পরে পর পর ভূমি-র অনুষ্ঠান রয়েছে খান বিশেক। সেই নিয়ে ব্যস্ততা তুঙ্গে। গ্রামের পুজোর স্মৃতিটাই এখনও মনে লেগে আছে। দুর্গা পুজো নিয়ে কলকাতার অহেতুক শহুরে উন্মদনাকে ভালো লাগাতে পারিনি কোনওদিনই। এই ব্যাপারে আমি বোধহয় বাঙালিই না একেবারে। পুজো শেষ হলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।

সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখা

bengali culture Durga Puja 2019
Advertisment