অফ-সিজনের শুরুতেই গোয়ার সমস্ত জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পটগুলো 'নো সেলফি' সতর্কবার্তায় ছেয়ে গেছে। ১৭ জুন তোলা ট্যুরিস্ট মৃত্যুর একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই এই রাজ্যের সমস্ত জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতে লাগানো হয়েছে লাল পতাকাও।
গোয়ার জনপ্রিয়তম ট্যুরিস্ট স্পট ফোর্ট আগুডাতে আচমকা ঢেউয়ে তামিলনাড়ুর এক যুবকের অকালমৃত্যু হয়। সূর্যোদয়ের সময় তোলা এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। সমুদ্র সৈকতের দ্বায়িত্বে থাকা লাইফগার্ডরা এই ঢেউকে ভয়ঙ্করতম বলে আখ্যা দিয়েছেন।
গোয়ার ৪০টি সমুদ্র সৈকতের দ্বায়িত্বে থাকা লাইফগার্ড এজেন্সি দৃষ্টি মেরিনের সিইও রবি শঙ্কর বলেন, "বিপদসঙ্কেত লেখা একটি পুরানো বোর্ডের ঠিক নিচে বসেই এই ভিডিওটি তোলা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এভাবেই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছেন ট্যুরিস্টরা। সমুদ্রে জলের গভীরতা এবং সৈকতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সচেতনতার অভাবেই এরকম দুর্ঘটনা ঘটছে।"
এই ভিডিওটি ভাইরাল হবার পর গোয়ার রাজ্য সরকার জানিয়েছেন এবছর অফ-সিজনের শুরুতেই এরকম চারটি অপমৃত্যু ঘটেছে। প্রসঙ্গত, প্রবল বর্ষার দরুন গোয়ায় অফ-সিজন চলে ৩১ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর অবধি।
সম্প্রতি গোয়ার কালাঙ্গুটে সৈকতে ভোরবেলা মহারাষ্ট্র থেকে বেড়াতে আসা একটি দলের মধ্যে পাঁচজন ডুবে যায়। জানা গেছে এরা প্রত্যেকেই 'নো স্যুইম জোন' লেখা অঞ্চলে সাঁতার কাটতে নেমেছিলেন এবং দলের অন্য কয়েকজন এর ভিডিও তুলছিল। গত ২৩ মে ভাগাতোর টাওয়ারে সেলফি তুলতে ওঠা এক যুবকও ঢেউয়ে তলিয়ে যান।
শুক্রবার গোয়ার উত্তরের বাগা নদী, ডোনা পলা জেটি, সিঙ্কেরিম ফোর্ট, অঞ্জুনা, ভাগাতোর, মর্জিম, আশ্বেম, আরাম্বোল, কেরিম এবং দক্ষিনের আগোন্ডা, বগমালো, হলান, বায়না, জাপানিজ গার্ডেন, কাঙ্গুইনিম, পালোলেম, কাবো ডি রামা, পোলেম, গাল্গিবাগ, তালপোনা এবং রাজবাগের সমস্ত সৈকতে লাল পতাকা লাগানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজ্যের কিছু স্থানীয় ব্যাক্তি জানিয়েছেন সমুদ্রে নেমে বিপদের আশঙ্কার কথা জানানোর পর বেশ কিছু ট্যুরিস্ট তাঁদের সঙ্গে অপব্যবহার করেছেন। সমুদ্রের বিপদসঙ্কুল অঞ্চলে সেলফি স্টিক নিয়ে ছবি তুলতে বাধা দেবার দরুন ট্যুরিস্টদের কাছে মার খেয়েছেন, এহেন অভিযোগও করেছেন লাইফগার্ডরা।
আরও পড়ুন- সাব-ইনস্পেক্টর সঙ্গীতা বেরার মা হওয়া থেকে রাগবি মাঠে ফেরার গল্প
গত পাঁচ বছরে বিপদ থেকে উদ্ধার করা মোট ১৬৫৩জন ট্যুরিস্টের মধ্যে ১২৮৫জন ট্যুরিস্টই এদেশের নাগরিক। এবছর বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার হওয়া ভারতীয়র সংখ্যা ৭৩জন।
অভিজ্ঞ লাইফগার্ড অশ্বিন গগ বলেন ডুবে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ডুবে যান। তিনি আরও বলেন, "বিদেশীদের তুলনায় এদেশের ট্যুরিস্টদের অনেকেই ঠিকমত সাঁতার না শিখলেও সমুদ্রে নেমে পড়েন। এই ধরণের ঘটনায় জীবনের ঝুঁকি বেশি এবং আমরা এক্ষেত্রে কড়া নজর রাখি।"
কালাঙ্গুটে সৈকতের সিনিয়র পুলিস ইন্সপেক্টর জিভা দালভি বলেন গত সপ্তাহে সেলফি তুলতে সমুদ্রে নামা একটি দলের মধ্যে থেকে একজনকে চোরাস্রোত টেনে নিয়ে গেছিল। "আমরা সেলফি তুলতে বাধা দিইনা। তবে খাদের ধার অথবা পিচ্ছিল পাথর আছে এরকম জায়গায় সেলফি তুলতে না যাওয়াই ভাল।"
আরও পড়ুন- বিলুপ্তির পথে অভিনব প্রজাতির সাঁতার কাটা খরাই উট
ট্যুরিস্টরা এখন খুব ভোরবেলা ও সমুদ্রে যাচ্ছেন এই দাবীতে গোয়া পুলিস ২৪ ঘন্টা লাইফগার্ড ব্যবস্থা চালু করার অনুরোধ জানিয়েছেন।