চাঁদের পথে পাড়ি দিল দেশের দ্বিতীয় চন্দ্রযান। সারা দেশ অপেক্ষায় ছিল এই দিনটির জন্যই। দিন সাতেক আগে একবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে গেলেও গতকাল অর্থাৎ সোমবার শ্রীহরিকোটা থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে চন্দ্রযান-২। এবং এখন মোটামুটি সকলেই জানেন, ভারতের এই চন্দ্রাভিযানের নেপথ্যে রয়েছেন দুই মহিলা বিজ্ঞানী, মুত্থাইয়া ভানিথা এবং রীতু কারিধাল।
ভানিথা ইসরোতে রয়েছেন বিগত ৩২ বছর ধরে। তাঁর বাবা চেন্নাইয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়র এবং ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ইঞ্জিনিয়র হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ভানিথা সর্বকনিষ্ঠ ইঞ্জিনিয়র হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ইসরো-তে। ২০০৬ সালে তিনি অ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার সেরা বিজ্ঞানীর পুরস্কার পান।
আরেকজন হলেন চন্দ্রযান-২ এর ডিরেক্টর ঋতু কারিধাল শ্রীবাস্তব। পেশায় এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার ঋতু ইসরোতে ২২ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন। লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। এর আগেও ইসরোর মঙ্গলযান উৎক্ষেপণের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। পিএইচডি করতে করতেই ডাক পান ইসরো থেকে। ২০০৭ সালে এপিজে আব্দুল কালামের হাত থেকে তরুণ বিজ্ঞানীর পুরস্কার পান ঋতু।
আরও পড়ুন, এখন কোথায় আছে চন্দ্রযান?
ঋতুর প্রাক্তন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক ঘণ্টার দূরত্বেই উত্তরকাশীর ১৩৩টি গ্রাম সম্প্রতি খবরে এসেছে, তবে সম্পূর্ণ অন্য কারণে। গ্রামগুলিতে গত তিন মাসে ২১৬ টি শিশুর জন্ম হয়েছে। তারা সবাই পুত্রসন্তান। এ ঘটনা নিছকই কাকতালীয় হওয়া অসম্ভব। কারণ প্রকৃতি এ রকম বৈষম্য ঘটায় না। একমাত্র 'বিশেষ পদ্ধতি'-র সাহায্যেই এই বৈষম্য ঘটানো সম্ভব। অর্থাৎ বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আধুনিক লিঙ্গ নির্ধারণ পরিষেবা মিলছে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। প্রসঙ্গত, ভ্রূণ হত্যা এবং লিঙ্গ নির্ধারণ, দুটিই এ দেশে দণ্ডনীয় অপরাধ।
দুটি ঘটনার মধ্যে মিল নেই কোনও। বরং চূড়ান্ত এক বৈষম্য দু'টি ঘটনাকে এক পংক্তিতে বসিয়ে দিয়ে গেল। দেশে নারী প্রগতি, পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মহিলাদের এগিয়ে থাকার তত্ত্ব নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন উত্তরাখণ্ডের মতো এই ঘটনাগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয় 'বিচ্ছিন্ন' ঘটনা হিসেবে। অথচ শ্রীহরিকোটা আর উত্তরাখণ্ড, কতই বা দূরত্ব?
নিছকই কাকতালীয় হলেও উত্তরাখণ্ডের ওইসব গ্রামের ঘটনা সামনে এসেছে ২২ জুলাই। একই দিনে পৃথিবীর চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের দিকে রওনা দিয়েছে ভারত। যে দিনটা শুধু গৌরবের হতে পারত, এক ভয়াবহ স্মৃতি আজীবন কলঙ্কিত করে রাখবে তা।