/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/31/indian-gandhi-2025-10-31-13-20-36.jpg)
Indian Gandhi: ইন্দিরা গান্ধী।
Indira Gandhi Assassination: ১৯৮৪ সালের ৩০শে অক্টোবর। ভুবনেশ্বরের জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সাধারণত তাঁর সেক্রেটারি শারদা প্রসাদের লেখা স্ক্রিপ্টই পড়তেন তিনি। কিন্তু সেদিন ঘটেছিল এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। ভাষণের শেষে হঠাৎই তিনি বলেন, 'আমি জীবিত থাকি বা না থাকি, আমার জীবন যথেষ্ট দীর্ঘ হয়েছে। আমি গর্বিত যে আমার জীবন মানুষকে সেবা করতে পেরেছে। আমার রক্তের প্রতিটি বিন্দু ভারতের মাটিকে আরও শক্তিশালী করবে।'
সেই সময় কেউই বুঝতে পারেননি, যেন নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করে ফেলেছিলেন দেশের লৌহমানবী প্রধানমন্ত্রী। মাত্র একদিন পরেই, ৩১শে অক্টোবর সকালে, দিল্লির সফদরজং রোডে তাঁর সরকারি বাসভবনের সামনে শিখ নিরাপত্তারক্ষী বিয়ন্ত সিং ও সতবন্ত সিং তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। খবরটি ছড়িয়ে পড়তে না পড়তেই স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা দেশ। সফদরজং রোডের সবুজ লনে রক্তে ভেসে যায় ভারতের রাজনীতির এক অধ্যায়।
আরও পড়ুন- আর কিছু লাগবে না, ঘরে বানানো এই জিনিসেই চুলের সব সমস্যার সমাধান একনিমেষে!
নিরাপত্তা সতর্কতা ও ইন্দিরার অস্বীকার
সেই সময় দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ততটা কড়া ছিল না। তবে, ইন্দিরার ওপর শিখ নিরাপত্তাকর্মীদের নিয়ে হুমকি আসছিল বারবার। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা একটি নোট পাঠিয়েছিলেন—শিখ দেহরক্ষীদের বদলানোর অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ইন্দিরা সেই নোটে বড় করে লিখেছিলেন, 'বাতিল'। পাশাপাশি বলেছিলেন, 'আমি একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশের প্রধানমন্ত্রী। ধর্ম দেখে নিরাপত্তাকর্মী বাছব না।' সেই মানবিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন- রাজস্থানের বুন্দি, নীল শহরের সোপানকূপে সময়ের প্রতিধ্বনি পর্যটকদের হাতছানি দেয়
ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের মূলে ছিল পঞ্জাবে জ্বলতে থাকা খালিস্তান আন্দোলনের আগুন। আলাদা শিখ রাষ্ট্রের দাবি প্রথম ওঠে ষাটের দশকের মাঝামাঝি। যা 'আনন্দপুর সাহিব প্রস্তাব' নামে পরিচিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দাবি রূপ নেয় সশস্ত্র আন্দোলনে। কট্টরপন্থী নেতা জার্নেল সিং ভিন্দ্রেনওয়ালা হয়ে ওঠেন শিখ যুবকদের নায়ক। কিন্তু মজার বিষয়—ভিন্দ্রেনওয়ালাকে গোপনে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করেছিল কংগ্রেস নিজেই, অকালি দলের প্রভাব কমাতে। আর্থিক সাহায্য, অস্ত্র, সবই পৌঁছেছিল তাঁর হাতে। অল্প সময়েই ভিন্দ্রেনওয়ালা হয়ে ওঠেন এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি।
আরও পড়ুন- চিনপাই গ্রামের বড়মা সিদ্ধেশ্বরী, যাঁর দর্শনে পূর্ণ হয় ভক্তের মনস্কামনা!
১৯৮৪ সালের জুন মাসে ইন্দিরা গান্ধী শুরু করেন, 'অপারেশন ব্লুস্টার'। যার লক্ষ্য ছিল, অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গিদের দমন। কিন্তু সেই অভিযানই পরিণত হয় ভয়াবহ রক্তক্ষয়ে। বহু সেনা ও সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারান, ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিখ ধর্মের পবিত্রতম স্থান হরমন্দির সাহিব। শিখ সমাজের মনে তৈরি হয় গভীর ক্ষোভ।
আরও পড়ুন- না জিতে মাঠ ছাড়েন না, 'হার' শব্দটি নেই এই ৫ রাশির অভিধানে!
ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ভয়ংকর শিখবিরোধী দাঙ্গা। হাজারো শিখ নাগরিক নিহত হন, পুড়ে যায় ঘরবাড়ি, দোকান, গুরুদ্বার। ভারতের ইতিহাসে এটি আজও এক অন্ধকার অধ্যায়। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু শুধু এক ব্যক্তির পরিসমাপ্তি নয়, বরং এক রাজনৈতিক যুগের অবসান। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব, কঠোর সিদ্ধান্ত এবং বিতর্কিত নীতিগুলির মিশেলে তিনি আজও ভারতের ইতিহাসে এক অনন্য চরিত্র। তাঁর শেষ ভাষণের সেই শব্দগুলো আজও গর্জে ওঠে—'আমার রক্তের প্রতিটি বিন্দু ভারতের মাটিকে শক্তিশালী করবে।' কিন্তু, ইতিহাসের পৃষ্ঠায় সেই রক্তই এক গভীর প্রশ্ন রেখে গেছে—ধর্মনিরপেক্ষতার মাশুল কি কখনও এতটা ভয়াবহ হতে পারে?
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us