Advertisment

চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেছিলেন ফরাসিদের দেওয়ান, আজও চলছে সেই পুজো

ধনসম্পদের লোভে ও ঈর্ষায় কাতর হয়ে রবার্ট ক্লাইভ লুঠ করেছিলেন চন্দননগর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Chandannagar Adi Maa

চন্দননগরে এবছর 'আদি মা'-এর পুজো

ইংরেজদের যেমন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল। তেমনই ফরাসিদেরও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল। এই বঙ্গে যার সদর ছিল চন্দননগর। আর, সেখানে ফরাসিদের দেওয়ান ছিলেন ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। সেই সময় চন্দননগরকে ডাকা হত ফরাসডাঙা। এই ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীই চন্দননগরে বড় আকারে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেন। যেমনটা কৃষ্ণনগরে করেছিলেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। জগদ্ধাত্রী পুজো অবশ্য বাংলায় আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু, সেসব পুজো হত বাড়িতে। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অথবা ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীদের মত বিপুল ধনীরাও এই পুজো শুরু করায় তা ব্যাপক প্রচার পায়।

Advertisment

কথিত আছে, ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ফরাসিদের কাছে সাধারণ কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। পরে তিনি ফরাসিদের দেওয়ান পদে উন্নীত হন। তার সঙ্গেই চালের ব্যবসা, সুদের কারবার করে অগাধ সম্পত্তির মালিক হন। এমনকী, বাৎসরিক ১২ হাজার টাকায় ফরাসিদের কাছ থেকে চন্দননগর ইজারাও নিয়ে নেন। সেই সময় লক্ষ্মীগঞ্জে গঙ্গার ধারের আড়তে থাকত মণ মণ ধান। নৌকোয় তা চলে যেত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই কাজের চাপ থাকত দুর্গাপুজোর চার দিনও। সেই সময় ব্যবসায়ীরা কোনও আনন্দই করতে পারতেন না। সেই দুঃখ দূর করতেই ব্যবসায়ীদের আবদারে নিজের প্রাসাদেই ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। সেই শুরু হল চন্দননগরে বড় আকারে জগদ্ধাত্রী পুজোর।

কথিত আছে ইন্দ্রনারায়ণের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের থেকেও বেশি। ফরাসিদের পর্যন্ত তিনি ধার দিতেন। কৃষ্ণচন্দ্রকে নবাবের লোকজন বন্দি করলে, ইন্দ্রনারায়ণ বিপুল অর্থ দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে পর্যন্ত এনেছিলেন। ধর্মপ্রাণ ইন্দ্রনারায়ণ সেই সময় গড়ে তুলেছিলেন নন্দদুলাল মন্দির। ইন্দ্রনারায়ণের এই বিপুল বাণিজ্যিক ক্ষমতার জন্য তাঁর প্রতি ঈর্ষা করতে শুরু করেন ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ। তিনি চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জকে বলতেন 'গ্রেনারি অফ বেঙ্গল'। সেই লক্ষ্মীগঞ্জ লুঠ করতে স্থল ও জলপথে চন্দননগর আক্রমণ করেন ক্লাইভ। নির্মম হত্যা, লুঠপাটের কামানের গোলায় বিধ্বস্ত করে দেন ইন্দ্রনারায়ণের প্রাসাদ ও গোলা। ব্যাপক লুঠপাট চালান নন্দদুলাল মন্দিরেও।

আরও পড়ুন- চারদিন ধরে জগদ্ধাত্রী পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে চান? যেতেই হবে চন্দনননগর

তারপর থেকেই যে ব্যবসায়ীদের জন্য ইন্দ্রনারায়ণ এই পুজো তাঁর বাড়িতে চালু করেছিলেন, সেই ব্যবসায়ীরাই পুজো শুরু করেন চাউলপট্টিতে। নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে সেই পুজো শুরু হয়। প্রথম সংকল্প করা হয়েছিল ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর নামে। পরবর্তীতে পুরুষানুক্রমে দেওয়ান চৌধুরীদের উত্তরসূরিদের নামে হয় পুজোর সংকল্প। এই পুজো চন্দননগরে 'আদি মা'র পুজো নামে পরিচিত। আজও সেই পুজো চলে আসছে একইরকম রীতি মেনে।

Durgapuja jagadhatri puja 2022 British
Advertisment