ভারতে চলচ্চিত্র উৎসবের জন্মকথা

প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রতিযোগিতামূলক চলচ্চিত্র উৎসব হবে। পরে অবশ্য জানানো হয়, সে বছর শুধুমাত্র ভেনিস এবং কান্সের উৎসবই কেবল প্রতিযোগিতার অনুমতি পেয়েছে। 

প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রতিযোগিতামূলক চলচ্চিত্র উৎসব হবে। পরে অবশ্য জানানো হয়, সে বছর শুধুমাত্র ভেনিস এবং কান্সের উৎসবই কেবল প্রতিযোগিতার অনুমতি পেয়েছে। 

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জন্ম ১৯৫২ সালে বম্বেতে। তবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ভাবনার জন্ম কিন্তু আরও মাস ছয়েক আগে, কাশ্মীর উপত্যকায়। কাশ্মীর সফরে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। তার কাছে এরকম এক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রস্তাব দেন প্রযোজক মোহন ভবনানি। ভবনানি নিজে ততদিনে প্রচুর নির্বাক ছবি বানিয়ে ফেলেছেন। প্যারিসের এক বৈঠকে ইউনেসকোর চলচ্চিত্র বিশারদ কমিটির সঙ্গে কথা বলে ফেলেছেন, জানিয়েছেন চলচ্চিত্র উৎসবের ভাবনার কথাও।

Advertisment

কী ভাবে ভারতে চলচ্চিত্র উৎসবের ধারণা এল, সেই নিয়ে ১৯৮৩ সালের এক প্রবন্ধে চলচ্চিত্র নির্মাতা কে এল খান্দপুর বর্ণনা করেছেন। খান্দপুর তখন এক তথ্যচিত্রের শুটিং করছিলেন কাশ্মীর উপত্যকায়। সে সময় রবিবারের এক সন্ধ্যায় ডাল লেকের হাউসবোটে ভবনানি ডেকে পাঠালেন খান্দপুরকে।

publive-image হলিউড অভিনেতা ফ্রাঙ্ক কাপরার সঙ্গে সুরাইয়া

"রবিবার আমরা সবে দুপুরের খাওয়া সারছি, ভবনানির তরফে এক ভদ্রলোক আমাদের কাছে শিকারা নিয়ে এলেন। ভবনানি নেহরু এবং তৎকালীন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী দিবাকরের সঙ্গে চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে কথা বলতে চাইছিলেন। তারও আগে উৎসবের বাজেট নিয়ে কথা বলতে চাইছিলেন তিনি। আমার সঙ্গে তার আগে প্রায় ৪৫ মিনিট কথা হল। ১ লক্ষ টাকা বাজেট ঠিক হল।  নেহরুর সঙ্গে আলোচনার পর ফিরে এসে ভবনানি জানালেন ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর মত রয়েছে", লিখেছেন খান্দপুর।

এরপর বম্বে, মাদ্রাস, কলকাতা, দিল্লি জুড়ে পাঁচ সপ্তাহের সফর চলল, পরিকল্পনা চলল। অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্ট বিচারক স্যার ক্লিফোর্ড মনমোহন আগরওয়ালের নেতৃত্বে গঠিত হলকেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটির দশজন সদস্যের মধ্যে ছিলেন অভিনেত্রী নার্গিসও। 
Advertisment
publive-image

প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রতিযোগিতামূলক চলচ্চিত্র উৎসব হবে। পরে অবশ্য জানানো হয়, সে বছর শুধুমাত্র ভেনিস এবং কান্সের উৎসবই কেবল প্রতিযোগিতার অনুমতি পেয়েছে।

উৎসবের উদ্বোধন হল ২৪ জানুয়ারি নিউ এম্পায়ারে। মন্ত্রী দিবাকরের সঙ্গে নেহরুরও থাকার কথা ছিল, কিন্তু বিশেষ কারণে থাকতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী। বম্বের চলচ্চিত্র মহলের তারকাখচিত উৎসব হয়ে উঠল এই মঞ্চ। ১২ টা দেশ থেকে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা এলেন অংশগ্রহণ করতে। সবচেয়ে বড় দল এল অবিভক্ত সোভিয়েত রাশিয়া থেকে, ১৩ সদস্যের দল। চিন থেকে এল ৬ সদস্যের দল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান থেকেও এলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা।

publive-image

৪০ টি আন্তর্জাতিক ছবি, এবং ১০০ টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি নিয়ে হয়েছিল চলচ্চিত্র উৎসব। সাড়া ফেলে দেওয়া ছবিগুলির মধ্যে ছিল 'বাইসাইকেল থিভস', 'রোম ওপেন সিটি', 'মিরাকল অ্যান্ড মিরান', 'ফল অব বার্লিন', 'গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'। দি সিকার বাইসাইকেল থিভস থেকে অনুপ্রানিত হয়েই সত্যজিৎ রায় বানালেন 'পথের পাঁচালি'। বিমল রায় দো বিঘা জমিন বানালেন ইতালির ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই। চরম সাফল্যের পরেও কিন্তু পরের বছর আর আয়জিত হল না চলচ্চিত্র উৎসব। তার পরের বছরেও না। দীর্ঘ ৯ বছর পর ১৯৬১ সাল থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হতে শুরু করল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।