Advertisment

রফিক-সালাম-বরকতকে মনে আছে, আর ধীরেন্দ্রনাথ?

১৮৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ। প্রাথমিক পড়াশুনো ঢাকায়। উচ্চতর শিক্ষালাভ করেছিলেন কলকাতার রিপন কলেজে। ছাত্রাবস্থা থেকেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি- পল্লবী দে

ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে মনে আছে? ১৯৭১ সালে তাঁকে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়েছিল। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলার অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রথম থেকেই সরব ছিলেন তিনি।

Advertisment

১৯৪৮ সালে, ঢাকার রেসকোর্স ময়দান থেকে মহম্মদ আলি জিন্নাহ ঘোষণা করলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। অন্য কোনও ভাষা নয়। এব্যাপারে কোনও সংশয়-দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে যারা, তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। 

জিন্নাহর এ ঘোষণা বহু বাংলাভাষী মেনে নিতে পারেননি। তাঁদেরই একজন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি তৎকালীন পাক প্রশাসনের কাছে দাবি জানান বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। আমৃত্যু স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথকে ১৯৭১ সালে হত্যা করা হয়। 

১৮৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ। প্রাথমিক পড়াশুনো ঢাকায়। উচ্চতর শিক্ষালাভ করেছিলেন কলকাতার রিপন কলেজে। ছাত্রাবস্থা থেকেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। ১৯৪৬ সালের ভোটে কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচন লড়ে মনোনীত তৎকালীন বাংলা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন ধীরেন্দ্রনাথ। স্বাধীনতার পরে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে যোগ দেন একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিক হিসেবে। ১৯৫৪ সালে, পূর্ব পাকিস্তানে গভর্নরের শাসন জারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে  অনাস্থাপ্রস্তাব এনেছিলেন তিনি। ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ধীরেন্দ্রনাথ পাকিস্তানের আতাউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। 

১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময়ে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে পাক সরকার গৃহবন্দি করে রাখে। কিন্তু সে বন্দিদশা বাঙালি জনগণের মুক্তি আন্দোলনে সংহতিজ্ঞাপন থেকে তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার কিছুদিন আগে, ধীরেন্দ্রনাথ ও তাঁর পুত্র দিলীপ দত্তকে ময়নামতী ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়। তাঁর স্মৃতিকে জাগরূক রাখতে ধীরেন্দ্রনাথের বাড়ির সামনের রাস্তাটি তাঁর নামাঙ্কিত করা হয়েছে।

রফিক-সালাম-বরকতকে তাও কিছুটা মনে রেখেছে বাঙালি। তবু এই প্রজন্মের কাছে তাঁদেরও নতুন করে পরিচয় দরকার।

আবুল বরকত  (১৯২৭-১৯৫২)

বরকতের জন্ম মুর্শিদাবাদে, ১৯২৭ সালে। কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়াশুনো শেষে দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে ঢাকায় আসেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করার পর ১৯৫১ সালে ভর্তি হন এমএ বিভাগে। ১৯৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন তিনি। ১৪৪ ধারা অমান্যকারী ওই মিছিল আটকাতে পুলিস গুলি চালায়। গুলিতে আহত বরকতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে পরদিন সেখানেই মারা যান তিনি। ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করেছে। 

রফিকউদ্দিন আহমেদ (১৯২৬-১৯৫২)

১৯২৬ সালে মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন রফিকউদ্দিন। ১৯৪৯ সালে বায়রা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর বাবার ব্যবসায়ে কাজ করতে শুরু করেন। ১৯৫২ সালের একুশের মিছিলে তিনিও ছিলেন একজন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সেনা পাহারায় তাঁকে আজিমগঞ্জ কবরখানায় সমাধিস্থ করা হয়। ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে সম্মানিত হয়েছেন তিনিও। 

আবদুস সালাম (১৯২৫-১৯৫২)

১৯২৫ সালে ফেণীতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুস সালাম। ম্যাট্রিক পাস করার পর অর্থাভাবে পড়াশুনো এগোয়নি। চলে যান কলকাতায়। সেখানে বন্দরে কাজ করতে থাকেন। স্বাধীনতার পর আবার ফিরে আসেন ঢাকায়, শিল্পবিভাগের দস্তাবেজ সংরক্ষণের কাজে যোগ দেন। আবদুস সালাম ২১ ফেব্রুয়ারির মিছিলে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হন মারাত্মক ভাবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে প্রায় দেড়মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর এপ্রিলের ৭ তারিখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। ২০০০ সালে তাঁকেও একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। তাঁর স্মৃতিতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৮ সালে ভাষা শহিদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার স্থাপন করেছে। তাঁর স্মরণে লক্ষ্ণণপুর গ্রামের নাম বদলে রাখা হয়েছে সালামনগর। 

আবদুল জব্বার (১৯১৮-১৯৫২)

১৯১৯ সালে ময়মনসিংহে জন্মেছিলেন আবদুল জব্বার। আর্থিক দুরবস্থার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা শেষেই তিনি পারিবারিক কৃষিকাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৫ বছর বয়সে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় এক ইংরেজের সঙ্গে তিনি পাড়ি দেন বার্মায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শাশুড়ির চিকিৎসার জন্য তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আসেন। শাশুড়িকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর মিছিলে যোগ দেন তিনি। ভারী গুলিবর্ষণের সময়ে আবদুল জব্বারও গুলিবিদ্ধ হন এবং গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালেই মারা যান তিনি। তাঁর আত্মত্যাগ স্মরণে রেখে বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করেছে। 

শফিউর রহমান (১৯১৮-১৯৫২)

হুগলি জেলার কোন্নগরে জন্মেছিলেন শফিউর। কলকাতায় শিক্ষাগ্রহণ শেষে ঢাকা হাইকোর্টের হিসাবরক্ষণ বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ২১ পেব্রুয়ারি ঢাকায় তাণ্ডবের পরদিন, ২২ ফেব্রুয়ারি কর্মস্থলে যাওয়ার পথে পুলিসের গুলিতে নিহত হন শফিউর। তাঁকেও অন্য ভাষাশহিদদের সঙ্গে আজিমপুর কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়। এ ঘটনার দুদিন পর, তাঁর বাবা হাকিম মাহবুবুর রহমান অন্য প্রতিবাদী ছাত্রদের সঙ্গে প্রথম ভাষা শহিদ মিনারের উদ্বোধন করেন।

Advertisment