বছর শেষের উদযাপনের মরশুম এসে গিয়েছে। শপিং নিশ্চয়ই শুরু হয়ে গেছে এতদিনে, জমিয়ে কেনাকাটা চলছে প্রত্যেক উইকেন্ডে। আর হবে নাই বা কেন বলুন? যে পরিমাণ ছাড় দিচ্ছে আজকাল নানা বিপণন সংস্থা, ২ টো কিনলে পাঁচটা ফ্রি, এমন অফার মিস করা যায় নাকি? আপনার হিসেবের মধ্যে হয়তো তিনটে সোয়েটার কেনার ছিল, না হয় দুটো বাড়তি হয়ে গেল কিন্তু তার সাথে আরো ছটা মাফলার পেয়ে গেলেন যে! বাড়িতে গুরুজনরা রাগ করছেন মাসের বাজেট পেরিয়ে যাচ্ছে বলে? তার ওপর শহরে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা গুচ্ছ গুচ্ছ শপিংমল, তারা তো বলেই দিয়েছে বেশি কিনলে তারও বেশি সাশ্রয় হবে। কিন্তু বাড়িতে কেউ বুঝছেন না? আহা রে! বেশ, আপনি একটু মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবুন তো কিনলে সত্যিই কি বেশি সাশ্রয় হয়?
কখনও কখনও কথাটা হয়তো ঠিকই। বেশি কিনলে সাশ্রয় হয়, কিন্তু কোথায় ঠিক সেটা কিন্তু আপনাকে বুদ্ধি খাটিয়ে ভেবে নিতে হবে। অনেক সময় অনেক জায়গায় আপনি পড়েছেন একবারে বেশি কিনে নিলে খরচ কম হয়। কোথায় এমনটা হয় জানেন? চাল ডাল আর যা কিছু নিয়মিত বাড়িতে লাগে, যেমন শ্যাম্পু-সাবান-আপনার রোজকার প্রসাধনীর কিছু জিনিস যা ফুরিয়ে গেলেই আরেকটা লাগবে এবং নিয়মিত যেগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলো বাল্কে কিনে রাখলে খরচ কম হয়। দুটো কিনলে একটা ফ্রি, এই ধরনের অফার আপনি নিতে পারেন তাতে আপনার সাশ্রয় হবে। কারণ একটা পাউডার শেষ হলে আপনার আরেকটা পাউডার লাগবে। সেখানে দুটো দামে যদি তিনটে কিনে ফেলেন তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু যে জিনিস আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন না সে ক্ষেত্রে কিন্তু বেশি কিনলে অহেতুক খরচ হয়।
আরও পড়ুন, আপনার কি সারাক্ষণ কিনতে ইচ্ছে করে? কীভাবে সামলাবেন নিজেকে?
একটু বুঝিয়ে বলি? আপনার ডিসেম্বরে মাসের বাজেট বলছিল আপনি তিনটে গরম শাল কিনবেন নতুন কিন্তু রাজারহাটের নতুন গজিয়ে ওঠা শপিং মলের এক আকাশ জোড়া বিজ্ঞাপন বলেছে ৫000 টাকার বাজার করলে ২000 টাকার কেনাকাটা বিনামূল্যে করতে পারবেন। এই অফারের লোভ সম্বরণ করতে পারলেন না, তাই তো? এবার কি দাঁড়ালো শুনুন। তিনটে শালের জন্য আপনার বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার টাকা, সেখানে পাঁচটা জামা কিনলেন ৫ হাজার টাকা দিয়ে।
তারপর যে বাড়তি ২০০০ টাকার অফারটা পেলেন সেখানে কী হবে? প্রতিবার ২ হাজার টাকার বাজার করলে আপনি ৫00 টাকা ফ্রি পাবেন। কী ভাবে? ৫০০০ টাকার পরেও আপনাকে চার বার ২০০০ টাকা করে বাজার করতে হচ্ছে প্রতিবার ৫০০ টাকা ছাড় পাওয়ার জন্য। এতে সমস্যা কোথায়? প্রতিমাসে আপনার বাজেটের বাইরে চলে যাচ্ছে খরচ। আরেকটা সমস্যা আছে, এই যে এত বাড়তি পোশাক আপনার বাড়িতে জমা হচ্ছে আপনার কাজে লাগছে না। হাতে করে অন্য কাউকে দিয়েও দিতে পারছেন না। অথচ আপনি ফ্যাশন ফ্রিক। আপনি জানেন একটা গোটা বছর গরম জামাগুলো আলমারিতে তুলে রাখলে পরের বছর যখন বার করবেন সেটা ততক্ষণে আউট অব ফ্যাশন হয়ে গেছে। অতএব নেহাত পাড়ায় পরে যাওয়া ছাড়া আপনি সেসব জামা কোথাও পরবেন না।
আরও পড়ুন, লিপস্টিক কী ভাবে লাগালে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয়?
তাহলে বোকা বনে গেলেন তো? ৩০০০ টাকার বাজার করার বদলে ১৩ হাজার টাকার বাজার আপনাকে করতে হয়েছে। সাশ্রয় হলো কী? তাই বলে কি কেনাকাটা করতে যাওয়ার সময় তালিকা তৈরি করে নিন অবশ্যই। দরকার এর বাইরের জিনিস অযথা কিনবেন না। বিপননণ সংস্থাগুলি লাভের জন্য ব্যবসা করবে সেটা খুব স্বাভাবিক। এখানে আপনাকে মাথা খাটিয়ে বুঝতে হবে কোনটাতে আদতে আপনার সাশ্রয় হচ্ছে। সেই যে শুরুতে তিন হাজার টাকা বাজেট নিয়ে আপনি বেরিয়ে ছিলেন সাশ্রয় কিন্তু তাতেই হতো। কিন্তু খোলা বাজারের ফাঁদে পা দিয়ে আপনি সমস্যায় পড়ছেন। কী ধরনের সমস্যা? তিন হাজারের বদলে আপনার খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। আপনাকে ধার করতে হয়েছে অন্য কারোর কাছ থেকে, সেটি হতে পারে পরিবারের সদস্য কিংবা পরিবারের বাইরের কেউ। সেই টাকা মাসে মাসে শোধ করা কী সমস্যা সে নিশ্চয়ই আপনি জানেন।
এবার কিন্তু পুজোর শপিং করুন মাথা খাটিয়ে। দেখবেন সাশ্রয় হচ্ছে। আর বাড়তি কিছু টাকা যদি হাতে থেকেই থাকে ভালো কোনও কাজে ব্যয় করুন। আপনার পাশাপাশি আপনার সমাজের কিছু অংশে পুজোয় আনন্দ করতে পারে না। মাসিক বাজেটের ৫০০ টাকা না হয় তাদের জন্য রাখলেন। লোভনীয় অফার মিস করে যাবেন, কোনও কুপন পাবেন না কিন্তু পুজোর চারটে দিন দেখবেন অন্যরকমের একটা ভালোলাগা থেকে যাবে।