বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যেই চিকিৎসক মহলের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। এই রোগ মূলত করোনাক্রান্ত রোগী বা সদ্য করোনামুক্ত ব্যক্তির মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণ এতই বেশি যে গত ২০শে মে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অতিমারী আইনের আওতায় একে অতিমারী হিসাবেও ঘোষণা করা হয়।
এবার এই রোগের চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে ‘লিচ্ বা জোঁক থেরাপি’- এমনি দাবী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের একাংশের। ইতিমধ্যে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে কিছু রোগী এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে বেছে নিয়েছেন। উল্লেখ্য, আয়ুর্বেদ চিকিৎসার অতি প্রাচীন চিকিৎসা প্রণালীগুলির মধ্যে এই জোঁক থেরাপি অন্যতম। এই পদ্ধতিতে দূষিত রক্ত বাইরে বেরিয়ে গিয়ে রক্ত শোধন করতে সাহায্য করে। চিকিৎসায় ব্যবহৃত জোঁক, সংক্রামিত অংশ থেকে দূষিত রক্ত শুষে নেওয়ার পাশাপাশি কিছু উৎসেচকেরও ক্ষরণ ঘটায় যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ।
ফাজলানি নেচার নেস্ট-এর আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞ ডাঃ অশ্বথ পাথিয়াথ বলছেন, “কোমর্বিডিটি যুক্ত করোনা রোগীদের ক্ষেত্রেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আক্রমণ বেশী ঘটছে। ফাঙ্গাসের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে সাধারণত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যারমধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে সংক্রামিত মিউকোরমাইকোসিস এবং ত্বকের সংক্রামিত মিউকোরমাইকোসিসকে দুষ্টব্রণ,কুষ্ঠ ও বাতবিসর্পের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এই সব ক্ষেত্রে জোঁক-থেরাপি চিকিৎসার অন্যতম পদ্ধতি হতে পারে, তবে তা নির্ভর করবে আক্রান্তের শারীরিক অবস্থা ও সংক্রমণের মাত্রার উপর।”
তিনি আরও বলেন, “এক্ষেত্রে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার চিরাচরিত পদ্ধতিগুলি, যেমন- ক্লেদহরা ও প্রেমেহহরা (ডায়াবিটিস ও সেই সংক্রান্ত ত্বক সমস্যার চিকিৎসা), অগ্নিবর্ধকা (হজম বর্ধক পদ্ধতি), কৃমিহরা ও ওজবর্ধকা (সংক্রমণের চিকিৎসা) এবং রসায়ন চিকিৎসার পাশাপাশি মিউকোরমাইকোসিস-এর চিকিৎসায় জোঁক থেরাপিও কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। তবে পুরোটাই নির্ভর করবে সংক্রামিত ক্ষতস্থানের উপর।”
অন্যদিকে লখনউ-এর রিজেন্সি সুপারস্পেশালিটি হসপিটালের ডাক্তার যশ জাভেরি জানান, “এই পদ্ধতি কিছু ক্ষেত্রে কার্যকরী হলেও মিউকোরমাইকোসিসের চিকিৎসায় জোঁক থেরাপি ব্যবহারের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। যে কোন ধরনের থেরাপি ব্যবহারে সর্তকতা প্রয়োজন।” এই বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করে পারস হেলথকেয়ার-এর ইএনটি সার্জেন ডাক্তার অমিতাভ মালিক বলেন, “বিশ্বজুড়ে এই রোগ নিরাময়ের একটি পদ্ধতিই প্রমাণিত হয়েছে। তা হল ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে সার্জারির মাধ্যমে বাদ দেওয়া এবং অ্যাম্ফোটেরিসিন বি লিপসমাল এবং অন্য অ্যান্টিফাঙ্গাল-ওষুধের প্রয়োগ। তাঁর মতে মানুষ যে চিকিৎসা পদ্ধতিতেই বিশ্বাস রাখুন না কেন জোঁক থেরাপি-র কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন