মুর্শিদাবাদ সীমান্তে নদিয়ার পাগলাচণ্ডী রেলস্টেশন। তার পূর্বদিকে রয়েছে দেবী পাগলাচণ্ডীর মন্দির। রেল স্টেশন থেকে টোটো চেপে সহজে এই মন্দিরে আসা যায়। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী অত্যন্ত ভক্তবৎসল। তিনি ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ করেন। আর, তাই দূর-দূরান্ত থেকে এই মন্দিরে ভক্তরা আসেন। দেবীর দর্শন লাভ করেন। দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। যাতে মনস্কামনা পূরণ হয়। এমনটাই বিশ্বাস এই মন্দিরের ভক্তদের।
দেবী পাগলাচণ্ডীকে ঘিরে আছে অজস্র অলৌকিক কাহিনি। এমন সব কাহিনি, যা শুনলে গায়ে কাঁটা দেবে। এখানকার ইতিহাস যাঁরা জানেন, তাঁদের দাবি দেবীর অলৌকিক প্রভাবেই রেল সংস্থা দেবীর মন্দির তৈরি করে দিতে বাধ্য হয়েছিল। শুধু রেল সংস্থাই নয়। বাংলার নবাব থেকে ব্রিটিশরা এই দেবীর বিগ্রহ ভাঙতে এসেছিল। কিন্তু, দেবীর অলৌকিক ক্ষমতা দেখে তাঁরা ভয়ে পালিয়ে যায়। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই দেবীর পুজো কয়েকশো বছর ধরে চলছে।
এই দেবীর পুজোর ইতিহাসটা শুরু হয়েছে পাগলাচণ্ডী স্টেশনের পশ্চিমে পানিঘাটা নামে এক জায়গা থেকে। একটা সময় যেখান দিয়ে ভাগীরথী বয়ে যেত। তার পাশে পাগলাবাবা নামে এক সন্ন্যাসী দেবী চণ্ডীর উপাসনা করতেন। তিনি একদিন দেখতে পান, তাঁর প্রতিষ্ঠিত দেবীর বিগ্রহ নেই। শেষ পর্যন্ত তিনি বর্তমানে যেখানে মন্দির, সেখানেই জঙ্গলের মধ্যে দেবীর বিগ্রহ খুঁজে পান। ভক্তদের দাবি, এর পর ওই সাধক দেবীর বিগ্রহে বিলীন হয়ে যান।
এরপর তৎকালীন সময়ের এক অত্যন্ত নামী ব্যবসায়ী বর্তমানে যেখানে মন্দির, বাণিজ্য করতে যাওয়ার সময় সেখানে দেবীর জ্যোতি দেখতে পান। তিনি দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন, বাণিজ্য করে লাভ করলে দেবীকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তিনি বাণিজ্যে লাভ করে ফেরার পথে দেবীকে একটি গাছের নীচে বেদিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ক্রমে দেবীর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। যাতে ঈর্ষাকাতর হয়ে মুর্শিদাবাদের নবাবরা এসে দেবীর বিগ্রহ ভাঙার চেষ্টা করেন। কিন্তু, দেবীর অলৌকিক ক্ষমতায় নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পালিয়ে যান।
আরও পড়ুন- অতিজাগ্রত কূলেশ্বরী কালীমন্দির, পুজোর রাতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় করেন অগণিত ভক্ত
এরপর এই অঞ্চল দিয়ে ব্রিটিশরা রেলপথ তৈরির চেষ্টা করে। কিন্তু, দেবীর স্বপ্নাদেশ আর অলৌকিক সব কাজকর্ম দেখে তাঁরা দেবীর ছোট মন্দির তৈরি করে দেন। আর, মন্দির থেকে দূরে রেলপথের পরিকল্পনা করেন। স্টেশন তৈরি করে দেন দেবী পাগলাচণ্ডীর নামে। এখানকার জেলেরা স্থায়ী বড় দহে আজও মঙ্গল ও শনিবার মাছ ধরেন না। কারণ, ওই দুই দিন দেবীর পুজো হয়।
ওই দিনগুলোয় মাছ ধরতে গেলেই তাঁরা দেখতে পেতেন যে দহের জলের ওপর দিয়ে ফুটফুটে শিশু হেঁটে বেড়াচ্ছে। অথবা, ওই দিনগুলোয় তাঁরা কিছুতেই দহের জল থেকে জাল টেনে তুলতে পারতেন না। অথবা দহের জল রক্তের মত লাল হয়ে যেত। ভক্তদের বিশ্বাস, আজও দেবী পাগলাচণ্ডীকে অস্বীকার করলে ঘটে চরম বিপদ। আর, পাশাপাশি দেবীর শরণে এসে তাঁর বিগ্রহ দর্শন করে প্রার্থনা জানালে দেবীই পূরণ করেন মনস্কামনা।