কেউ বলেন এই পুজো ছশো বছরের পুরোনো। কেউ বলেন সাতশো। এখানকার গ্রামের বাসিন্দারা আজও ভয়ে-ভক্তিতে বাড়িতে কালীপুজো করেন না। কালী ঠাকুর পর্যন্ত রাখেন না। যা পুজো হয়, সব গ্রামের মন্দিরে। এই ভয় এবং ভক্তির বিশেষ কারণও আছে। কারণ, এখানে চুরি করতে এসে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে চোর। অসুস্থ মহিলার মেয়েকে সালঙ্কারা দেবী দেখা দিয়েছেন মধ্যরাতে। আশ্বাস দিয়েছেন তাঁর মাকে সুস্থ করে দেওয়ার। এখানকার দিঘিতে পুজোর সময় নেমন্তন্ন করে আসলে, পুকুর থেকে উঠে আসত চাহিদামত কাঁসার বাসন।
এমন অজস্র অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী গোকনা কালী মন্দির। ভক্তদের দাবি, দেবী এখানে জাগ্রত। যাঁর টানে সারা বাংলা থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন এই মন্দিরে। দেবীকে এখানে ভবানী রূপে পুজো করা হয়। নিত্যপুজো, বিশেষ তিথিতে পুজো তো আছেই। দীপান্বিতা অমাবস্যায় হয় বড় আকারে পুজো। আগে এই গোটা অঞ্চল ছিল গভীর জঙ্গলে ঘেরা। মন্দিরের কাছেই পুকুর।
কথিত আছে, সেই পুকুরে স্নান করে নরবলি দিত ডাকাতরা। তারপর বের হত ডাকাতি করতে। আজ অবশ্য এখানে পাঁঠাবলি পর্যন্ত বন্ধ। হাঁড়িকাঠ অবধি নেই। কীভাবে আসবেন এই মন্দিরে? শিয়ালদহ থেকে হাসনাবাদ শাখার ট্রেন ধরে নামতে হবে কাঁকড়া মির্জানগর স্টেশনে। সেখান থেকে অটোয় চেপে যাওয়া যাবে বসিরহাটের এই কালী মন্দিরে।
আরও পড়ুন- জাগ্রত মানিকেশ্বের শিব মন্দির, মনস্কামনা পূরণের জন্য ভিনরাজ্য থেকেও ছুটে আসেন ভক্তরা
আজ যেখানে পাকা মন্দির, একসময় সেখানেই ছিল মাটির মন্দির। ধান্যকুড়িয়ার জমিদার মহেন্দ্রনাথ গাইনের ছেলে অসুস্থ হয়ে মরণাপন্ন হয়ে পড়েছিলেন। শোনা যায়, জমিদার স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দিরে ছুটে আসেন। দেবীর আশীর্বাদে পুনরুজ্জীবন লাভ করেছিলেন জমিদারের ছেলে। খুশি হয়ে জমিদার সেই মাটির মন্দিরটি পাকা করে দেন। দেবীর কৃষ্ণবর্ণের পাথরের মূর্তি চতুর্দোলায় চাপিয়ে কাশী থেকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। সাজানো, গোছানো মন্দির তৈরির পর গ্রামের জমিতে চাষের সময় অলৌকিকভাবে উদ্ধার হয়েছিল তিনটি শিবলিঙ্গ- বৈদ্যনাথ, মানেশ্বর ও পঞ্চানন। যা আজও মন্দিরে দেবীর সঙ্গে পূজিত হয়ে আসছে।