বাংলার কালী সাধনার ইতিহাসে রামপ্রসাদ সেন অন্যতম বড় নাম। তাঁর তৈরি শ্যামাসংগীতগুলো দিনের পর দিন ধরে সাধকদের উৎসাহিত করেছে। তাঁদের দেবী বন্দনার পরিচয় হয়ে উঠেছে। কথিত আছে সেই রামপ্রসাদ সেনও ভয়াবহ বিপদে পড়েছিলেন। আর, সেটা ডাকাতদের জন্য। সেই সময় বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছিল ডাকাতদের উৎপাত। আর, এই ডাকাতদের অনেকেই ছিল কালী সাধক। দেবীর পুজো করেই তারা ডাকাতি করতে বের হত।
ত্রিবেণীর পূর্ব পাড় সেই সময় ছিল জঙ্গলে ভরা। আর, তা ছিল ডাকাতদের আস্তানাও। কথিত আছে, ডাকাতরা রামপ্রসাদ সেনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এই মহান সাধককে বলি দেবে বলে স্থির করেছিল। আর, যে মন্দিরে তারা ওই মহান কালীসাধককে বলি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেটাও ত্রিবেণীর পূর্ব পাড়ে। কিন্তু, বলি দিতে গিয়ে দেবী চমৎকার দেখতে পায় ডাকাতদল। হাড়িকাঠে রামপ্রসাদের বদলে ভেসে ওঠে দেবী কালীর মূর্তি। বারবার একই ঘটনা ঘটায় ডাকাতরা আর রামপ্রসাদকে বলি তো দিতেই পারেনি। উলটে, তাঁর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে। আর, পরদিন রামপ্রসাদকে সসম্মানে বাড়ি পৌঁছে দেয়।
শুধুমাত্র রামপ্রসাদের ঘটনাই নয়। ভক্তদের ধারণা, ত্রিবেণীর এই কালী অত্যন্ত জাগ্রত। আর, সেই কারণে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এই মন্দিরে ছুটে আসেন মনস্কামনা পূরণের জন্য। নানাপ্রকার বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। ঠিক কবেকার এই মন্দির, তা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে ধন্দ রয়েছে। কারণ, বংশ পরম্পরায় এই মন্দিরে যাতায়াত করেন, এমন ভক্তের সংখ্যা বহু। তাই সহজেই বোঝা যায় যে এটি অত্যন্ত প্রাচীন মন্দির।
আরও পড়ুন- ডুমুরদহের জাগ্রত বুনোকালী, দেবীর কৃপায় বড় বিপদ থেকেও রক্ষা পান ভক্তরা
দেব দক্ষিণাকালীর এই গম্বুজাকার মন্দির একচূড়াবিশিষ্ট। তার সামনে রয়েছে বিশাল চাতাল। মন্দিরের পিছনের রয়েছে বিশাল পুকুর। জায়গাটা ত্রিবেণী ঘাট থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে। যে সাত গ্রাম নিয়ে সপ্তগ্রাম তৈরি হয়েছিল, তার অন্যতম বাসুদেবপুর। সেই বাসুদেবপুরেই রয়েছে এই মন্দির। বিপদ, আপদে ভক্তদের ভরসা। তাই সারাবছর এই মন্দিরে ভিড় লেগেই থাকে।