বহু প্রাচীন কাল থেকেই নদিয়ার শান্তিপুর বাংলার অন্যতম তীর্থক্ষেত্র। চৈতন্যদেবের সময়কালেও এখানকার সাধকদের বিশেষ নামডাক ছিল। বছরের পর বছর কেটেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়েছে। তবুও নদিয়ার বিভিন্ন তীর্থস্থানের অলৌকিক কাহিনিতে ভাটা পড়েনি। বরং, সময়ের তালে তা আরও বেড়েছে। নদিয়ার এমনই এক তীর্থস্থান হল শান্তিপুরের জলেশ্বর শিবমন্দির। এই মন্দির রয়েছে মতিগঞ্জের বেজপাড়ায়।
কবে এই মন্দির তৈরি হয়েছে, তা সঠিকভাবে বলতে পারেন না স্থানীয় বাসিন্দারাই। তার মধ্যে অনেকে বলেন, এটি সপ্তদশ শতাব্দীর শেষদিকে তৈরি হয়েছিল। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পূর্বপুরুষ রাঘর রায় এই মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন। আবার অনেকে বলেন, এই মন্দির রাজা রুদ্রের ছোট ছেলে আঠেরো শতকের প্রথমদিকে তৈরি করান। মন্দিরে কোনও প্রতিষ্ঠালিপি না-থাকায় এভাবেই চলে জল্পনা। সে যাই হোক, আগে এই শিবলিঙ্গ রানির শিব বা রুদ্রকান্ত নামে পরিচিত ছিল।
কথিত আছে, একবার কৃষিপ্রধান নদিয়ায় বৃ্ষ্টির চরম আকাল দেখা দেয়। সেই সময় প্রখ্যাত সাধক বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী এই শিবমন্দিরে ছুটে আসেন। তিনি বৃষ্টিপাতের কামনায় এই মন্দিরে শিবের মাথায় প্রচুর গঙ্গাজল ঢালেন। তারপরই এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এই কারণে, এই শিবমন্দিরের নাম বদলে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা একে জলেশ্বর শিবমন্দির নাম ঢাকতে শুরু করেন। আজও এই নামেই পরিচিত শান্তিপুরের শিবমন্দিরটি।
আরও পড়ুন- পূরণ হবে বাসনা, নাশ হবে শত্রু, জেনে নিন আজ কী করতে হবে
এমনই বহু অলৌকিক কাহিনি রয়েছে এই শিবমন্দিরকে ঘিরে। এখানকার শিবলিঙ্গটি কালো পাথরের। যার উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট। প্রতিদিন এখানে পুজো হয়। মিউনিসিপ্যাল কমিশনার এবং অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট কালীচরণ চট্টোপাধ্যায়ের পূর্বপুরুষরা এই মন্দিরের সেবায়েত ছিলেন। কালীচরণ চট্টোপাধ্যায় নিজে একবার এই মন্দিরের সংস্কার করান। তাঁর মেয়ে মোহিতকুমারীর সময়কালে এই মন্দিরের সংলগ্ন নাটমন্দির তৈরি হয়।
দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত আসেন এই মন্দিরে। কথিত আছে, ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন জলেশ্বর শিব। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিও তাই হামেশাই জলেশ্বর শিবের মন্দিরে ছুটে আসেন। এই মন্দিরে যেতে গেলে নামতে হবে শান্তিপুরে স্টেশনে। স্টেশন থেকে রিকশা বা টোটোয় জলেশ্বর মন্দিরে যাওয়া যায়। আবার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বাসে বা গাড়িতেও জলেশ্বর মন্দিরে যাওয়া যাবে।