পুণ্যতীর্থ জলেশ্বর। যেখানে প্রায় সারাবছরই শিবলিঙ্গ থাকে জলের তলায়। ভক্তদের দাবি, এখানে শিব পূরণ করেন মনস্কামনা। কথিত আছে, সেন বংশের রাজত্বকালে, দ্বাদশ শতকের শেষের দিকে এই এলাকার শিব পূজার প্রচলন শুরু হয়। সেই সময় মন্দিরে ছিল টিনের ছাউনি। আর দেওয়ালে ছিল ইট এবং কাদার গাঁথনি।
পরে গোবরডাঙার জমিদার রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় শিবমন্দিরের জন্য ৬০ বিঘা জমি দান করেন। প্রাচীন মূল বিগ্রহটি বছরের বেশিরভাগ সময় থাকে মন্দিরের পাশে পুকুরের মধ্যে ডুবন্ত অবস্থায়। ৪ একর ৪০ শতক জমির ওপর তৈরি এই পুকুর। ভক্তদের কাছে যা পরিচিত শিবপুকুর নামে।
প্রতি চৈত্র মাসের তৃতীয় সোমবার চড়কের জন্য আসা সন্ন্যাসীরা এই শিবপুকুর থেকে বিগ্রহ তুলে আনেন। তার পরদিনই সন্ন্যাসীরা হেঁটে হালিশহরে গিয়ে বিগ্রহটি গঙ্গায় স্নান করান। তারপর স্থানীয় আটটি গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়িতে পূজিত হয় এই শিবলিঙ্গ। পয়লা বৈশাখের দিন আবার এই শিবলিঙ্গ ডুবিয়ে দেওয়া হয় শিবপুকুরে। বছরের বাকি সময় অন্য একটি বিগ্রহ এই মন্দিরে পূজিত হন। সারা বছর দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত এখানে পূজা দিতে আসেন। মূল মন্দির ছাড়াও এখানে রয়েছে শিবের প্রতীক্ষা মন্দির। এছাড়াও রয়েছে একটি কালী মন্দির।
মন্দিরের পাশেই রয়েছে গাছ। সেখানে মনস্কামনা পূরণের জন্য ভক্তরা ঢিল বেঁধে যান। চড়কের সময় তো বটে, শ্রাবণ মাসের বিশেষ দিনেও এই মন্দিরে ব্যাপক ভক্তসমাগম হয়। কথিত আছে, একটা সময় এই শিবমন্দিরের জমি জবরদখল হয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় স্থানীয় আটটি গ্রামের বাসিন্দারাই তা ঠেকিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- অতিজাগ্রত বৌমারি শীতলা মন্দির, ভক্তদের বিশ্বাস এখানে মানুষের রূপে দেবীর দেখা মেলে
এই মন্দিরে আসতে গেলে, শিয়ালদহ থেকে বনগাঁ শাখার ট্রেন ধরে আসতে হবে হাবড়া স্টেশনে। স্টেশন থেকে বাইরে (বাঁদিকে) বেরিয়ে অটো বা বাসে (দক্ষিনেশ্বর-বনগাঁ ডিএন-৪৪) চেপে আসতে হবে জলেশ্বর মোড়। সেখান থেকে টোটোয় চেপে আসা যাবে জলেশ্বর মন্দির। হাবড়া থেকে জলেশ্বর মন্দিরের দূরত্ব ১২.৫ কিলোমিটার।