প্রতিটা বাড়িতে সন্ধ্যে হলেই এই একটাই সমস্যা, শত সহস্র মশা। আর তার জেরে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই, শান্তিতে বসতেও পারা যায় না, আর বাইরে দাড়ানো দুর অস্ত। মশাবাহিত অন্যান্য রোগের মত জাপানি এনকেফলাইটিস অন্যতম। এর টিকা থাকলেও অনেকেই সংক্রমিত হন, এবছরও অস্ট্রেলীয় প্রদেশে আক্রান্ত হয়েছেন বহু মানুষ, মারাও গিয়েছেন দুজন।
জাপানিজ এনকেফেলাইটিস আসলে কী?
আসলে এটি একটি ইনফেকশন যেটি মানুষের দ্বারাই ছড়িয়ে পড়ে। মশার কামড়ের ফলে সংক্রমণ ঘটে। এমন কোনও প্রাণী অথবা পাখি যারা ইনফেকটেড তাদের দেহে কোনও মশা হুল ফোটালে সেই থেকেই রোগের সূত্রপাত। পরবর্তীতে সেই মশাই যখন মানুষের দেহে এসে বসে, তাতেই মানবদেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে সেই ভাইরাস। সবথেকে বেশি সংক্রমণ ছড়াতে পারে শুকরের দেহ থেকে, ওদের রক্তেই ভাইরাসের মাত্রা প্রবল।
তবে শুকরের থেকে সরাসরি কিন্তু কেউই সংক্রমিত হয় না। এটি একমাত্র তখনই সম্ভব যখন মশা সেই সংক্রমিত শুকরের দেহে বসে এবং পরবর্তীতে মানবদেহে। এনকেফেলাইটিসের অর্থ মস্তিষ্কের প্রদাহ। এই প্রদাহ থেকেই শরীরে ইনফেকশনের মাত্রা বাড়তে পারে। জাপানিজ এনকেফেলাইটিস থেকেই দক্ষিণ এবং পূর্ব এশিয়ায় সবথেকে বেশি সংক্রমণ ঘটে, কম করে ৫০ থেকে ৭০,০০০। তাদের মধ্যে ১৫ থেকে ২০,০০০ মানুষ মারাও যান।
JEV কীভাবে শরীরের ক্ষতি করে?
কোনও ব্যক্তিকে মশা কামড়ালে সেটি সবার আগে ত্বকে সংক্রমণ ঘটায়। ত্বক থেকে কোষে পৌঁছায় এই ভাইরাস। এরপরেই লসিকা গ্রন্থির ক্ষেত্রে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। প্রায় এক সপ্তাহ স্থায়ী হয় এই সংক্রমণ। ইমিউনিটি কম থাকলে এইসময় খুব মুশকিল।
দ্বিতীয় ধাপে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমেই এটি শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যদি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল কাজ করে তবে রোগের মাত্রা কম করা সম্ভব। জ্বর, ফুসকুড়ি, মাথা ব্যাথা এবং বমি এই পর্যায়ে দেখা যেতে থাকে। এক থেকে চারদিন স্থায়ী হয় এটি। রক্তের মাধ্যমেই এটি মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডে প্রভাব বিস্তার করে। সেই সময় একটি সতর্ক থাকা প্রয়োজন, এর প্রভাবে অন্ত্রের কার্যকারিতা পরিবর্তন হয়।
কী ধরনের লক্ষণ দেখা যায়?
জ্বর, মাথাব্যথা, স্মৃতিভ্রম, হাড়ের দুর্বলতা, ছাড়াও গায়ে হাত পায় ফুসকুড়ি এগুলি দেখা যায়। প্রদাহের ফলে গা হাত পা ফুলে যায়, অনেক সময় ব্রেনের সমস্যা দেখা যায়, তখন কিন্তু মৃত্যু হতেই পারে।
কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?
যদিও বা এর সঠিক কোনও চিকিৎসা নেই। তবে ভ্যাকসিন রয়েছে। অনেক ছোট বয়েসেই সেটি প্রদান করা হয়। যেই সময় মশার কবলে পড়ার সম্ভাবনা বেশি তখন নিজেকে বাড়ির ভেতরে রাখুন। মস্কুইটো রেলিপেন্ট ব্যবহার করুন। জানলা বন্ধ রাখুন। অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন, প্রয়োজনে টিকা নিন। এইসময় যে এলাকায় শুকরের প্রভাব বেশি, বনদপ্তরে খবর দিন, তাদের এলাকা থেকে সরানোর ব্যবস্থা করুন।