বাংলার উত্তরবঙ্গ বরাবরই সাধনপীঠ। বহু জানা-অজানা সাধু-সন্ন্যাসী ও সাধকরা এই উত্তরবঙ্গকে তাঁদের সাধনক্ষেত্র বানিয়েছেন। আশ্চর্য করে দেওয়ার মত নানা ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন এখানকার বহু মানুষ। অনন্য সাধারণ সব তীর্থস্থান এখানে এত সাধারণভাবে ছড়িয়ে আছে, না-দেখলে তার গুরুত্ব বোঝা বেশ কঠিন। উত্তরবঙ্গের তেমনই এক তীর্থক্ষেত্র হল ময়নাগুড়ির জটিলেশ্বর মন্দির। এই মন্দির কে গড়ে তুলেছিলেন, কবে তা তৈরি হয়েছিল, সে যেন এক রহস্যের অন্ধকারে আজও ঢাকা আছে।
ময়নাগুড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে জলঢাকা নদীর কাছে এই জটিলেশ্বর মন্দিরটি রয়েছে। একদল গবেষক দীর্ঘ গবেষণার পর জানিয়েছেন, মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল পাল যুগে। আবার, অনেকের মতে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল পাল যুগের বহু আগে, সেই গুপ্ত যুগের জমানায়। আর, যাঁরা প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করে চলেছেন, সেই প্রত্নতত্ববিদরা জানিয়েছেন যে এই মন্দিরটি নবম শতকের। অর্থাৎ, বর্তমান সময়ের বিচারে এই মন্দিরের বয়স কমপক্ষে হাজার বছরেরও অনেক বেশি।
কিংবদন্তি অবশ্য দাবি করে মন্দিরটি তার চেয়েও নাকি পুরোনো। যাঁরা কিংবদন্তি মানেন, তাঁদের দাবি যে এই মন্দির ৩২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। প্রতিবছর শ্রাবণ ও ফাল্গুন মাসে জটিলেশ্বরে বিপুল ভক্ত সমাগম হয়ে থাকে। এই মন্দিরের দেওয়াল সময়ের কারণেই বারবার সংস্কার হয়েছে। আর, তাতে পুরোনো ঐতিহ্য খানিকটা হলেও মুছে গিয়েছে। তবে, আজও এই মন্দির সেই পুরোনো দিনের মতই জটাজুটধারী শিবের উপাসনাস্থল হিসেবেই ভক্তদের কাছে অতি পরিচিত।
আরও পড়ুন- এই বিশেষ দিনে কীভাবে কল্পতরু হয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ? তখন কারা ছিলেন সঙ্গে?
তবে, ঠিক কতটা প্রাচীন- সেই সব কারণের জন্য নয়। জটিলেশ্বর মন্দিরে ভক্তরা আসেন যাবতীয় কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। ভক্তদের বিশ্বাস, এই মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত। বাবা জটিলেশ্বর তাঁর ভক্তদের খালিহাতে ফেরান না। যত কঠিন ও জটিল সমস্যাই হোক না-কেন, ভোলানাথের কৃপায় এই মন্দিরে এসে ভক্তরা তা থেকে মুক্তি পান। বহু ভক্তই এখানে আসছেন বংশ পরম্পরায়।