পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমার থানার ভবানীপুর গ্রাম। এখানে রয়েছে জাগ্রত দেবী ঝিংলেশ্বরীর মন্দির। এই মন্দিরে বছরভর দেবী পূজিতা হন উগ্রতারা বিশালাক্ষী রূপে। মহিষাদলের রাজা দেবপ্রসাদ গর্গের নির্দেশে এখানে ঘটপুজোর মাধ্যমে দুর্গাপুজোর সময় দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয়।
দেবীর পাশে বাসুদেবের মূর্তি থাকায় এখানে জন্মাষ্টমীর পুজোও হয়। তবে সঙ্গে বাসুদেব থাকলেও দেবী আমিষাশী। নিত্য ভোগে থাকে কাঁকড়া, মাছ ও মাংস। ভক্তরা কখনও সখনও দেবীকে পায়রা দিয়ে পুজো দেওয়ার মানসিকও করেন। ভক্তদের দাবি, দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। তাঁর কাছে প্রার্থনা করলে পূরণ করেন।
কথিত আছে, একসময় এই মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যেত নদী। আজ যেখানে মন্দির, সেটা ছিল নদীর তীর। সেই সময় এই তীর ছিল হিঙ্গুল বনে ভরা। ৫০০ বছর আগে এখানে এসে ঠেকেছিল একটি জাহাজ। তার নাবিকরা তামাক খাচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁদের কাছে এসে একটি ১৩ বছরের মেয়ে তামাক খাওয়ার আবদার করে।
নাবিকরা তামাক দেওয়ার পরিবর্তে ওই মেয়েটিকে জাহাজে তুলে নিতে চায়। মেয়েটি তাঁদের সতর্ক করে বলেছিল, সে জাহাজে উঠলে জাহাজেরই ক্ষতি হবে। কিন্তু, সেসব না-শুনে নাবিকরা জোর করে মেয়েটিকে জাহাজে তোলে। আর, তারপরই জাহাজটি ওই জায়গায় বসে যায়। নাবিকরা তখন দেখতে পায়, মেয়েটি জাহাজের মাস্তুলে বসে রয়েছে। বর্তমানে এই ঝিংলেশ্বরী মন্দির জাহাজের মাস্তুলের ওপরেই অবস্থিত।
আরও পড়ুন- রাজপুরের জাগ্রত চণ্ডী মন্দির, যেখানে বাসনা পূরণ করেন দেবী বিপত্তারিণী
পরবর্তী সময়ে স্থানীয় পতি পদবির এক পরিবারের সদস্যকে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন। তাঁকে জানান যে তিনি হিঙ্গুল বনে আছেন। তাঁর পুজো করতে। সেই মত দেবীর পুজো শুরু হয়। দেবীকে বাসিন্দারা হিঙ্গুলেশ্বরী বলে ডাকা শুরু করেন। সেই নামই বদলে অপভ্রংশ হিসেবে এখন ঝিংলেশ্বরী হয়েছে। কথিত আছে, পতি পরিবারের এক সদস্য দেবীর থালা, বাসন চুরি করেছিলেন।
তাতে ক্ষুব্ধ দেবী অভিশাপ দিয়েছিলেন, পতি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। দেবীর অভিশাপ অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়। শেষ পর্যন্ত পতি পরিবারের শেষ সদস্য ভিমা দেবী ও ফুলেশ্বরী দেবী গ্রামেরই বাসিন্দা মিশ্র এবং উত্থাসিনী পরিবারকে পালা করে পুজোর দায়িত্ব দিয়ে যান। সেই পরিবারগুলোই চিরাচরিত প্রথা মেনে আজও জাগ্রত দেবীর পুজো করে চলেছে।