মথুরা-বৃন্দাবনের মতই বাংলার ঝুলন উৎসবের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। শাস্ত্রমতে শ্রীকৃষ্ণের ১২টি যাত্রার উল্লেখ আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রথযাত্রা, রাসযাত্রা, দোলযাত্রা, স্নানযাত্রা এবং ঝুলনযাত্রা। সেই অনুযায়ী, প্রতিবারের মত এবারও বাংলার বিভিন্ন জায়গায় পালিত হচ্ছে ঝুলনযাত্রা।
ইসকনের ঝুলন
মায়াপুরে ইসকনের ঝুলন এবার ৩৯ বছরে পড়েছে। ইসকনে গোয়ালের পাশে তৈরি হয়েছে ঝুলনযাত্রার মঞ্চ। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় চন্দ্রোদয় মন্দির থেকে দোলনায় বসিয়ে নাম সংকীর্তনের মধ্যে দিয়ে গোয়ালের পাশে ঝুলনযাত্রার মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ। রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত বিগ্রহ সেখানেই থাকছে। উৎসব শেষে বিগ্রহকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে মূল মন্দিরে। ঝূলন পূর্ণিমায় বলরাম জয়ন্তী পালনেরও প্রস্তুতি চলছে।
নবদ্বীপের ঝুলন
নবদ্বীপ বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে গুপ্ত বৃন্দাবন নামে পরিচিত। এখানে শ্যামসুন্দর-রাধারাণীর পাশাপাশি বলদেবের বিগ্রহকেও দোলনায় ঝোলানো হয়েছে। পাশাপাশি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বিগ্রহকেও ঝোলানো হয়েছে দোলনায়। এখানকার ঝুলন উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা আচার-অনুষ্ঠান এবং সাবেকি প্রথা। নানা ধরনের মাটির পুতুল, কাঠের দোলনা, গাছপালা দিয়ে এখানে ঝুলন সাজানো হয়েছে। ঝুলন উপলক্ষে নাম-সংকীর্তনেরও ব্যবস্থা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। লুচি-সুজি থেকে ফল, ২৫ রকমের নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়েছে রাধা-গোবিন্দকে। বলদেব বাড়ি থেকে শুরু করে রাধা-মদনমোহন মন্দির, মহাপ্রভু বাড়ি, সমাজ বাড়ির মত বিভিন্ন মঠ মন্দির এবং বনেদি বাড়িগুলোতে এই উৎসব পালিন হচ্ছে।
আরও পড়ুন- আজ শুরু ঝুলনযাত্রা, এই উৎসবের পিছনে আছে এক বিরাট কাহিনি
কলকাতার ঝুলন
শহর কলকাতাতেও বিভিন্ন জায়গায় পালিত হচ্ছে ঝুলন উৎসব। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বউবাজারের রামকানাই অধিকারীর 'ঝুলনবাড়ি'। ২০০ বছর ধরে এখানে ঝুলন উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এখানে বিগ্রহকে প্রথম দিন রাখাল বেশ, দ্বিতীয় দিন যোগী বেশ, তৃতীয় দিন সুবল বেশ, চতুর্থ দিন কোটাল বেশ, পঞ্চম বা শেষ দিনে রাজবেশে সাজানোর রীতি। দিন অনুযায়ী বদলায় ভোগও। এই বাড়িতে উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ উচ্চাঙ্গ সংগীতের আসর। যা অন্যবারের মত এবারও আয়োজন করা হয়েছে।