হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, ভগবান শিব যেখানে সহায়, সেখানে কেটে যায় যাবতীয় সমস্যা। কারণ, ভগবান শিব যাবতীয় সমস্যা হরণ করেন। তিনি স্বয়ং মঙ্গল বা সু অর্থাৎ ভালোর প্রতীক। নীলকণ্ঠের মত তিনি সমস্ত খারাপ থেকে ভক্তদের রক্ষা করেন। ভক্তদের বিপদ নাশ করেন। সেই কারণে হিন্দুদের মধ্যে ভগবান শিবের আরাধনা করার উৎসাহও বেশি করে লক্ষ্য করা যায়। শুধু একটি বা দুটি অঞ্চল নয়, ভারতের নানা প্রান্তে শিবভক্তের সংখ্যা অসংখ্য। পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়।
এরাজ্যে বহু গ্রামের নামকরণ হয়েছে ভগবান শিবের নামানুসারে। খোঁজ নিলে দেখা যায়, এলাকার কোনও মন্দিরকে ঘিরে হয়েছে এই নামকরণ। এমনই একটি গ্রাম হল মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা থানা ও ব্লকের অন্তর্গত যুগশরা। গ্রামেই যোগেশ্বর শিবের মন্দির রয়েছে। সেই থেকে এই নামকরণ। কথিত আছে, মহারাজ রামজীবন রায় এই যোগেশ্বর শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যুগশরা গ্রামের একেবারে শেষপ্রান্তে এই মন্দির। যার চত্বর গাছগাছালিতে ভরা।
এই মন্দির চত্বরে মোট ১৩টি মন্দির রয়েছে। ফুলের কথা যেমন মৌমাছির জানতে দেরি হয় না। তেমনই এই জাগ্রত যোগেশ্বর শিবের কথা জানতেও ভক্তদের দেরি হয়নি। যাঁরা জানেন, বংশপরম্পরায় এই মন্দিরে যাতায়াত করেন। বিপদে-আপদে পড়লেই এখানে ছুটে আসেন। এই ১৩টি মন্দিরের মধ্যে ৯টিতেই নিত্যপুজো হয়। আর, গোটা মন্দির চত্বর রাজ্য সরকারের দ্বারা সংরক্ষিত। ফলে, নিশ্চিন্তে ভক্তরা পুজো দেন। আর, সমস্যা থেকে রেহাই পান বলেই তাঁদের বিশ্বাস।
এই মন্দির চত্বরে পশ্চিম দিকে রয়েছে যোগেশ্বর শিব মন্দিরটি। উঁচু বেদির ওপর এই মন্দির। মন্দিরের মুখ দক্ষিণ দিকে। চারচালা এই মন্দিরে কোনও অলঙ্করণ নেই। মন্দিরে প্রবেশের পর দেখা যায় গর্ভগৃহে বেশ নীচে রয়েছেন যোগেশ্বর শিব। তিনি এখানে স্বয়ম্ভূ রূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন। বাকি আট মন্দিরের মত যোগেশ্বর শিবের মন্দিরেও নিত্যপুজোর ব্যবস্থা রয়েছে। এই মন্দিরের সামনে একটি নাটমন্দিরও আছে। তবে, সেই নাটমন্দিরের কাজ শেষ হয়নি।
আরও পড়ুন- কলকাতায় দেবী গন্ধেশ্বরীর জাগ্রত মন্দির, পুজো দিলেই বিভিন্ন ব্যবসায় কাটে বাধা
প্রতিবছর ২৩ থেকে ২৭ চৈত্র এই মন্দির প্রাঙ্গণে উৎসবের আয়োজন করা হয়। যুগশরা এবং আশপাশে অন্যান্য গ্রাম থেকে হাজার হাজার ভক্ত কাঁঠালিয়ার কাছে ভাগীরথী থেকে জল এনে যোগেশ্বর দেবের মাথায় ঢালেন। ২৭ চৈত্র, উৎসবের শেষ দিনে মন্দির প্রাঙ্গণে এক বিরাট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। মেলাও বসে এখানে। এই সময় বহু দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা যুগশরায় যোগেশ্বর দেবের পুজো দিতে আসেন। মুর্শিদাবাদের কান্দি থেকে বাসে আসা যায় বড়ঞাঁ থানা এলাকায়। সেখান থেকে টোটো যাতায়াত করে যুগশরা মন্দিরে।