Jora Ilish Boron Biye At saraswati Puja: মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বসন্ত পঞ্চমী (Vasant Panchami) বা সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) হয়। ওইদিন বহু বাঙালি বাড়িতে নিয়ম আছে জোড়া ইলিস বরণ ও বিয়ের। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই রীতি। পেট পুজোর এই বিশেষ উৎসবের পিছনে রয়েছে কোন যুক্তি, জানুন।
সরস্বতী পুজোর দিন জোড়া ইলিশ বরণ মূলত পূর্ববঙ্গীয়দের অন্যতম লোকাচার। কিছু বাড়িতে আবার এদিন ইলিশ মাছের বিয়ে দেওয়ার রীতি-ও রয়েছে। যদিও মনে করা হয়, সরস্বতী পুজোর সঙ্গে এই রীতির সরাসরি কোনও যোগ নেই। তবে একই চান্দ্র তিথিতে হয়, দুই অনুষ্ঠান। বসন্ত পঞ্চমীর দিন সকালে কাঁচা হলুদ মেখে স্থান করে ইলিশ মাছ নিয়ে আসা হয় বাজার থেকে। এরপর ধান, দূর্বা, তেল, সিঁদুর ও কাঁচা হলুদ সহযোগে মাছটি উলু ও শঙ্খ ধ্বনি দিয়ে বাড়িতে ঢুকিয়ে, কুলোর উপর সাজিয়ে রাখা হয়।
আরও পড়ুন- Saraswati Puja: সরস্বতী পুজোর পরের দিন গোটা সেদ্ধ খাওয়ার রীতি বহু যুগের, কেন?
কিছু পরিবারে, জোড়া ইলিশ মাছ বরণের সময়, দুটি গোটা বেগুন ও লাউ ডগাও রাখা হয়। অনেক পরিবারের নিয়ম, দু'টির জায়গায় একটি ইলিশ মাছ বরণ করা। সেখানে ইলিশের সঙ্গে নোড়া রাখা হয়, যাকে নোড়া দিয়ে জোড়া বা ইলশার বিয়ে বলে। নোড়াটি পুরুষ এবং মাছটিকে নারীর রূপে ধরা হয় এবং উলু- শঙ্খ ধ্বনি, ধান- দূর্বা, তেল, সিঁদুর, কাঁচা হলুদ দেওয়া হয় তখন।
বহু পরিবারে জোড়া ইলিশ বরণের সময় মুখে টাকা গুঁজে দেওয়া হয়। যিনি মাছ কাটবেন, সাধারণত এই টাকাটি তার প্রাপ্য। তবে মাছ কাটার ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ নিয়ম। আঁশ এদিক ওদিক যাতে ছড়িয়ে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। কলাপাতার উপর রেখে অনেকে আঁশ ছাড়ান। পরে সেটি মুড়ে যে কোনও পরিষ্কার স্থানে তা পুঁতে দিতে হয়।
জোড়া ইলিশ বরণ করার পর এই মাছ রান্নার ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ রীতি। ফোঁড়ন এবং সমস্ত তরকারি একসঙ্গেই দিতে হয় কড়াইতে। এই রান্নায় কোনও গুঁড়ো মশলা ব্যবহার করার নিয়ম নেই। কাঁচা হলুদ এবং কাঁচা লঙ্কা ব্যবহার করে এই পদ রান্না করা হয়।
আরও পড়ুন- Saraswati Puja 2024: বিদ্যার দেবী সরস্বতীর জন্ম কীভাবে? পুরাণ মতে রয়েছে একাধিক কাহিনি
এই নিয়ে নানা মতভেদ আছে। তবে মনে করা হয়, পূর্ববঙ্গের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ এক সময়, বিজয়া দশমীর পর আর ইলিশ মাছ ধরতেন না। বসন্ত পঞ্চমীর সময় থেকে আবার মাছ ধরতেন তাঁরা। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ সময় থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কালে অপরিণত ইলিশ ধরা পড়ে। আসলে এটাই শিশু ইলিশদের সমুদ্রে ফেরার সময়। শোনা যায়, বহু যুগ আগে পূর্ব বাংলার মৎস্যজীবীরা এদিন বিশেষ মঙ্গলাচরণের মধ্যে দিয়ে ইলিশ ধরার সূচনা করতেন।
আরও পড়ুন- Gota Seddho: সরস্বতী পুজোর রাতে কীভাবে বানাবেন গোটা সেদ্ধ? জানুন…
আবার লোক মুখে শোনা যায়, ব্রাক্ষণরা আগে ঘোর নিরামিষাশী থাকার ফলে মাছ খেতেন না। এরপর ধীরে ধীরে প্রচলন হল। শাস্ত্রে বলা আছে যে, মাছ আসলে সমুদ্রের ফল বা জল তরু তাই অনায়াসে মাছকে শাক সবজির মধ্যে ধরা হয়, এই কথা। বর্তমানে উৎসবের এই মেজাজ ও রীতিনীতি অনেকটা শিথিল হয়েছে কর্মব্যস্ততার জন্য। তবে শহরে কম হলেও, গ্রামাঞ্চল বা শহরতলিতে এখনও এই পার্বণ ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়।
আরও পড়ুন- Saraswati Puja: বাজারে দেদার বিকোচ্ছে, কিন্তু কেন সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই?