কথিত আছে, এই মন্দিরে দর্শন দেন দেবী ভগবতী। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, অগ্নি হলেন স্বয়ং শিব। আর তাঁর জ্বিহা হলেন প্রকৃতি বা শক্তি। কালী, করালী, মনোজবা, সুলহিতা, ধূম্রবর্ণা, স্ফূলিঙ্গিণী, বিশ্বরূপী হলেন অগ্নির জ্বিহা। তার মধ্যে কালী হচ্ছেন অগ্নি বা শিবের সপ্তম জিহ্বা। ভক্তদের মতে, হিমাচল প্রদেশের জ্বালামুখী মন্দিরে অগ্নির শিখা রূপেই ভক্তের সামনে দেবী কালী ধরা দেন।
আবার অনেকে বলেই জ্বালামুখী মন্দির দেবীর সতীপীঠ। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রে ছিন্ন হওয়া দেবী সতীর জিহ্বা এখানে পড়েছিল। তাই এই মন্দির ৫১ সতীপীঠের অন্যতম। দেবী এখানে সিদ্ধিদা রূপে অবস্থান করেন। তাঁর ভৈরব হলেন উন্মত্ত। ভক্তদের বিশ্বাস, অগ্নিময় জ্বিহা রূপেই এখানে দেবী ভক্তদের দর্শন দেন। এখানকার অগ্নিশিখা কখনও নেভে না। কবে থেকে এই শিখা জ্বলছে, কেউ জানেন না।
বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা আবার, ওই অগ্নিশিখা পর্বতের অভ্যন্তরে থাকা প্রাকৃতিক গ্যাসেরই রূপান্তর। সেই প্রাকৃতিক গ্যাসের খোঁজে গবেষণা চালিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞানীরা। কিন্তু, কাংড়ার পাহাড়ে কোনও প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান মেলেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, জ্বালামুখী দেবীর এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কাংড়ার রাজা ভূমিচাঁদ। দেবীই নাকি রাজাকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন। তাঁর অবস্থানের সন্ধান দিয়েছিলেন। তারপরই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা ভূমিচাঁদ।
এখানে দেবীর আলাদা কোনও মূর্তি নেই। বছরের যে কোনও সময় তাই এখানে দেবীদর্শন করা যায়। দিনরাত এই মন্দিরে দেবীর আরতি চলে। কথিত আছে সম্রাট আকবর এই মন্দিরে গিয়েছিলেন। তিনি জল ঢেলে মন্দিরের শিখা নিভিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু, হাজারো চেষ্টা করেও পারেননি। তারপর মোগল সম্রাট ভক্তিতে এই শিখার ওপর একটি সোনার ছাতা বানিয়ে দেন। কিন্তু, সেই সোনার ছাতা নাকি সঙ্গে সঙ্গেই ফুটো হয়ে যায়।
পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা ওই ছাতাটি পরীক্ষা করে, তার মধ্যে কোনও সোনাই খুঁজে পাননি। ভক্তদের বিশ্বাস, মোগল সম্রাটের অহংকারকে ধ্বংস করে দেবীই সোনাকে সাধারণ ধাতুতে পরিণত করেছিলেন। তবে, কথিত আছে আকবর নাকি ভয়ে ও ভক্তিতে অর্থব্যয় করে এই মন্দিরের তোরণদ্বার তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- যে মন্দিরে সারে যে কোনও প্রকার মানসিক রোগ, গবেষণা চালাচ্ছেন নাসার বিজ্ঞানীরাও
এর আগে সুলতানি সাম্রাজ্যের আমলেও ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছিল এই মন্দির। কিন্তু, তাঁবুতে থাকা সুলতান ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিছুতেই যখন কিছু হচ্ছে না, সেই সময় দেবী নাকি সুলতানকে স্বপ্নে দর্শন দিয়েছিলেন। ভয় দেখিয়েছিলেন। তারপরই তাঁবু গুটিয়ে সুলতান লোক-লস্কর নিয়ে দিল্লিতে ফিরে গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে বিপুল অর্থ মন্দিরের উন্নয়নে দান করেছিলেন। দিল্লিতে ফেরার পরই নাকি সুস্থ হয়ে যান সুলতান।
এরকম অজস্র কাহিনি রয়েছে এই মন্দিরকে ঘিরে। ভক্তদের দাবি, কোনও মানত করতে হয় না। এই মন্দিরে এসে দেবীর কাছে প্রার্থনা করলেই নাকি তা পূরণ হয়ে যায়। তাই, প্রতিদিন অসংখ্য ভক্ত এই মন্দিরে যাতায়াত করেন। ট্রেনে যেতে হলে নামতে হয় পাঠানকোটে। সেখান থেকে গাড়িতে ১২৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যাওয়া যাবে কাংড়ার জ্বালামুখী মন্দিরে। আবার বিমানে যাওয়া যেতে পারে ধরমশালা। সেখান থেকে যাওয়া যাবে জ্বালামুখী মন্দিরে। এই মন্দিরের আশপাশে প্রচুর হোটেল ধর্মশালা রয়েছে। আর্থিক সঙ্গতি অনুযায়ী, সেই হোটেল বা ধর্মশালায় থাকার ব্যবস্থা করে থাকেন দূর-দূরান্তের ভক্তরা।